চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবিহীন আমদানি
পণ্যের সিংহভাগই খালাস হয় বহির্নোঙরে। সেখান থেকে মাদার ভেসেল থেকে ভোগ্যপণ্য, সার,
ক্লিংকারসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল লাইটার জাহাজে স্থানান্তরিত হয়ে নৌপথে পরিবহন
হয়ে পৌঁছে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।
নদীপথে পণ্য পরিবহনে লাইটার জাহাজ পরিচালনার
এ কাজ দুই দশক ধরে করে আসছে ‘ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল’ বা ডব্লিউটিসি নামের একটি বেসরকারি
সংস্থা। কিন্তু একাধিক অভিযোগ তুলে এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে জাহাজ পরিচালনার
ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজমালিকদের একটি সংগঠন। নতুন এ সংস্থার নাম দেয়া
হয়েছে ‘ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম’ বা আইভোয়াক।
আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রামের
আগ্রাবাদে এ বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ হতে সভা আহ্বান করা হয়েছে।
আইভোয়াকের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
স্বাক্ষরিত চিঠিতে ডব্লিউটিসি থেকে নিজ সংগঠনের নাম প্রত্যাহার ও কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা
না রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, শুরু থেকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল তাদের
প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। যদিও পুরো খাতের স্বার্থে সংগঠন সদস্যরা
এতদিন মুখ ফুটে কিছু বলেননি। তার ওপর কয়েক বছর ধরে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কোনো
হিসাব নির্বাহী সভায় উপস্থাপন করা হয় না। অথচ কোটি কোটি টাকা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল
থেকে তুলে নেয়া হয়। এসব টাকা কীভাবে খরচ করা হয়েছে তা জানানোরও প্রয়োজন মনে করা হয়
নাই। ইদানিংকালে এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, মান-সম্মান বজায় রেখে চলাই মুশকিল
হয়ে পড়েছে।
আইভোয়াকের কো-কনভেনর পারভেজ আহমেদ বণিক
বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাহাজমালিকদের সংগঠন বিসিভোয়ার কিছু নেতা ডব্লিউটিসিকে
নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছেন। ফলে সাধারণ জাহাজমালিকদের স্বার্থ এখানে ক্ষুণ্ন
হয়েছে। আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ঘটনা অহরহ
ঘটছে। এছাড়া নির্বাহী কমিটির সভায় ডব্লিউটিসির কোনো হিসাবও তোলা হচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ
টাকা তুলে কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, তার হিসাবও পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনারবিহীন
পণ্যের সবচেয়ে বেশি নৌপথে পরিবহন হওয়ায় এখানে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ জন্যই আমাদের নতুনভাবে উদ্যেগ নিতে হলো। তাই ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের সব কার্যক্রম
থেকে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে
বাধ্য হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন
বহির্নোঙরে অবস্থান করা মাদার ভেসেল থেকে সারা দেশে সিমেন্টের কাঁচামাল, অপরিশোধিত
চিনি, গম, সার, পাথরসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্য লাইটার জাহাজে স্থানান্তর হয় নৌপথে। এক্ষেত্রে
বড় শিল্পগ্রুপগুলোও নিজস্ব জাহাজের পাশাপাশি ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল থেকে জাহাজ ভাড়া
নিয়ে থাকে। নৌপথে চলাচলকারী লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের
বরাদ্দ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে এসব ছোট জাহাজে করে স্থানীয় ঘাটগুলোর পাশাপশি অভ্যন্তরীণ
নৌপথে আমদানি পণ্য নেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন
গন্তব্যে।
ডব্লিউটিসির কনভেনর নুরুল হক এ প্রসঙ্গে
বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ সিরিয়াল মেনে
সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহণ করে থাকে। এই সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে আলাদাভাবে জাহাজ পরিচালনার
সুযোগ নেই। ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম (আইভোয়াক) নামে পণ্য
পরিবহনের ব্যাপারে যে উদ্যেগটি নেয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে গতকাল সোমবারও জুম মিটিং হয়েছে
মন্ত্রী এবং সচিব মহোদয়ের নির্দেশে। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি বসে আলোচনা করে সমাধানের কথা
আমাদের বলা হয়েছে। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব না।’
ডব্লিউটিসি গঠন হয়েছিল প্রায় দুই দশক
আগে। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এই সংস্থার কর্তৃত্ব চলে যায় জাহাজমালিকদের ‘বাংলাদেশ কার্গো
ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা বিসিভোয়ার হাতে। একপর্যায়ে জাহাজ পরিচালনার নানান বিষয়ে
মতভেদ তৈরি হতে থাকে জাহাজমালিকদের মধ্যে।
ডব্লিউটিসির গঠনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিলেন
সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ
নৌপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে মূলত ডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল। তবে বিশেষ করে গত এক
দশকের কার্যক্রমের রেকর্ড মোটেও সুখকর নয়। সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থকে
প্রাধান্য দিয়ে। দুর্নীতি অনিয়মে জড়িয়ে পড়া, অযোচিতভাবে ভাড়া বৃদ্ধি সবই হয়েছে নির্দিষ্ট
কিছু ব্যাক্তির ইচ্ছেমাফিক।’