নতুন সূচিতে এইচএসসি পরীক্ষা হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ আগস্ট। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে চারদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানায়, স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ আগস্ট থেকে শুরু হবে। তবে সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপকতা বাড়তে থাকায় নতুন সূচিতে পরীক্ষা হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ আগস্ট। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে চারদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানায়, স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ আগস্ট থেকে শুরু হবে। তবে সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপকতা বাড়তে থাকায় নতুন সূচিতে পরীক্ষা হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চত না করে কোনো পরীক্ষাই নেয়া হবে না। 

শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যেসব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন তাদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে। গতকাল শুক্রবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে ছিল তাদের উপস্থিতি। এসব শিক্ষার্থী বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষায় বসবেন না। এছাড়া শিক্ষক-অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে তারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করবেন না। 

আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। পরীক্ষার বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গতকাল রাজধানীর উত্তরায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যেসব শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, তাদের একজন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী তাবাসসুম অন্তরা (ছদ্মনাম)। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমার এক বন্ধু ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েও সে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের ভয়ে। অনেকে তো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাই গেছে। অনেককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এত কিছুর পর তো আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না।’

অন্তরার সঙ্গে থাকা আরেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সরকার দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত পরীক্ষায় বসব না। আমাদের যেসব ভাইকে বন্দি করা হয়েছে, তাদের সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পরীক্ষায় না বসার ঘোষণা দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া ১১ কলেজের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় না বসার ঘোষণা দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটির সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে বণিক বার্তা। কলেজগুলো হলো নটর ডেম কলেজ, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ ও ফরিদপুর সিটি কলেজ। 

শিক্ষকরা বলছেন, পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এ মুহূর্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে রাজি নয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ঢাকার একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন আর কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আন্দোলন এখনো চলছে। যদি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন না থামে তাহলে সরকার যতই সময়সূচি প্রকাশ করুক না কেন, পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব নয়।’ 

রাজধানীর ব্লুমিং সান স্কুলের অধ্যক্ষ আফরোজা হেলেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ১১ আগস্ট পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব বলে আমি মনে করি না। কারণ আমাদের সন্তানরা এখনো নিরাপদ নয়।’

একই কথা বলেন অভিভাবক মো. আল আমিন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখন শুধু আমাদের সন্তানরা নয়, তাদের সঙ্গে আমরা অভিভাবকরাও আন্দোলনে শামিল হয়েছি। যতদিন না আমাদের সন্তানদের দাবি আদায় হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমরাও আন্দোলনে আছি।’

বর্তমানে পরীক্ষা নেয়ার পরিবেশ নেই উল্লেখ করে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো কিংবা পরীক্ষা নেয়ার মতো উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের সন্তানরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোনো বিপদের মুখোমুখি হবে না, নিরাপদে ঘরে ফিরবে, তার নিশ্চয়তা নেই।’

পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রতি জোর দিচ্ছেন শিক্ষাবিদরাও। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের সভাপতি এবং এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার আগে অবশ্যই আন্দোলনের সুষ্ঠু সমাধান হতে হবে। হয় শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিতে হবে অথবা আলোচনার মাধ্যমে বিকল্প সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থায় পরীক্ষা আয়োজন করা উচিত হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদেরও এটা বুঝতে হবে হত্যার মতো বিষয়ের বিচার রাতারাতি সম্ভব নয়। তাদের ভবিষ্যতের জন্য পরীক্ষা দ্রুত শেষ হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় তারা পিছিয়ে পড়বে। তাই কিছু ক্ষেত্রে, যেমন বিচারের ক্ষেত্রে তাদের সরকারের ওপর আস্থা রেখে দেখা উচিত। তবে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার যে দাবি, এর সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত।’

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানার মামলায় গ্রেফতার ৭৮ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। 

সার্বিক বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১ আগস্ট আসতে এখনো ৮-৯ দিন বাকি। আমরা আপাতত পরীক্ষার একটি সূচি প্রকাশ করেছি যেন শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আমরা অবশ্যই পরীক্ষা নেব না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব এবং সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’

আরও