গ্যাস সংকটে ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত

পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত চার সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দুটি কারখানার উৎপাদন। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না হলে যথাযময়ে কৃষককে সার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সার উৎপাদন কম হবে সাড়ে তিন লাখ টন। ফলে ঘাটতি পূরণে সরকারকে ব্যয় করতে হবে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত চার সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দুটি কারখানার উৎপাদন। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না হলে যথাযময়ে কৃষককে সার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সার উৎপাদন কম হবে সাড়ে তিন লাখ টন। ফলে ঘাটতি পূরণে সরকারকে ব্যয় করতে হবে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। 

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) আওতাধীন সার কারখানা রয়েছে চারটি—আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। এসব কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন হয় প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। কিন্তু এর পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় চারটি সার কারখানারই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় এএফসিসিএল ও সিইউএফএলের কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে এবার পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিতে যাচ্ছে বিসিআইসি।

জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে টানা দুই মাস বন্ধ ছিল এসএফসিএলের উৎপাদন। গ্যাস টারবাইনে গোলযোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাটি ফের উৎপাদনে আসে মার্চে। কারখানা বন্ধ থাকায় গুনতে হয়েছে বড় অংকের লোকসান। এখন উৎপাদনে গেলেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না সার কারখানাটি। এর আগে গত বছরের জুন-ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস বন্ধ ছিল যমুনা সার কারখানা। প্রতিষ্ঠানটিতে গ্যাস সরবরাহকারী তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আগাম কিছু না জানিয়েই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে আবারো গ্যাস সরবরাহ শুরু করে তিতাস। তবে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে মিলছে না বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বারবার পেট্রোবাংলাকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা জানায়, সার কারখানার জন্য গ্যাস বরাদ্দ রয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএলসি)। এর চেয়ে বেশি গ্যাস তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। এখন সেটাও দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছর ইউরিয়া সার সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে।’

বিসিআইসি সূত্র জানায়, দেশে সার উৎপাদনে আগে টনপ্রতি খরচ পড়ত ১৭ হাজার টাকা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সে খরচ কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানীকৃত প্রতি টন সারের জন্য ব্যয় করতে হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। দেশে উৎপাদন থেকে আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় এবার চাহিদা অনুযায়ী সার আনতে সরকারকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি খরচ করতে হবে। ডলার সংকটের মধ্যে এ অর্থের জোগান নিয়েও শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা। 

আশুগঞ্জ সার কারখানার একটি সূত্র জানায়, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কিছুদিন আগে কারখানাটির বয়লার মেরামত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না করায় বয়লারটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হননি এএফসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল চন্দ্র দাস। 

এদিকে যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাঁচ মাস ধরে উৎপাদনে যেতে পারছে না সিইউএফএল। গত বছর কারখানাটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সেটিরও কার্যকারিতা যাচাই করা যায়নি। ফলে উৎপাদনেও যেতে পারেনি কারখানাটি। এতে গুরুত্বপূর্ণ অন্য যন্ত্রাংশেরও ক্ষতির আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। 

জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমরা কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ডকে গ্যাস দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। পেট্রোবাংলার কাছেও বারবার চিঠি দিয়ে কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কারখানার যন্ত্রাংশ একসময় অচল হয়ে যাবে।’

গ্যাস সংকটের কারণে সার উৎপাদন ব্যাহত হলেও এ বিষয়ে বিসিআইসির কোনো কর্মকর্তাই ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি কার্যালয়ে গেলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালকদের কেউ কথা বলেননি। 

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিসিআইসির বাণিজ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে দেশের চারটি কারখানায় ১০ লাখ টন সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্থবছরের ১১ মাস শেষ হয়ে গেলেও সার উৎপাদন করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৩ টন। কারখানাগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব না হলে বছর শেষে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৭ টন সারের ঘাটতি থাকবে। সেক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করতে হবে। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে (জিটুজি প্রক্রিয়ায়) সার আমদানি করে। এতে চাইলেও সংকটকালীন সার আমদানির কোনো সুযোগ নেই। এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না করলে আমাদের পক্ষে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি খাতের ওপর।’

আরও