দীর্ঘদিন
ধরে ভয়াবহ বন্যার কবলে লক্ষ্মীপুরের ৫
উপজেলার বাসিন্দারা। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত থাকায় পানিবন্দি বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে
ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন
পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। আশ্রয়কেন্দ্রসহ হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। শয্যা সংকটে মেঝেতে
নিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর
সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে
হিমশিম খাচ্ছেন নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহির থেকে স্যালাইনসহ ঔষধ কিনতে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালের রোগীদের।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গা নেই। এক একটি বেডে গাদাগাদি করে দুই- তিন জন করে ভর্তি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগীই বেডে জায়গা না পাওয়ায় মেঝেতেই বিছানা পেতে সারিবদ্ধ ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের
ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া
ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তিই আছে ৯৫ জন
রোগী। এক-দুজন নার্স
দিয়ে এতোগুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা
খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে- দশ জন ডাকে
ওষুধ দিতে। তার ওপর স্যালাইন
ও ডায়রিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সংকট রয়েছেঅ আপাতত রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে এসব কিনে আনলে
তা দিয়েই চিকিৎসা
চালিয়ে নিচ্ছি।
দুই
দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে
একই বেড ভাগ করে
আরো দুই রোগীর সঙ্গে
৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে
ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের
বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ
করে বলেন, গত ১০ দিন ধরে
বাড়িতে কোমর সমান পানিতে
বন্দি আছি। টয়লেট ও
ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে
মিশে একাকার। এখন
আমার ৭ মাসের ছেলের
জ্বর আর ডায়রিয়ায় খুব
খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতেল এসে আরো অস্বস্তিতে
পড়েছি। গুদাম ঘরের মত পরিস্থিতি
এখানে।
চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন
নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমনসহ
কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও
চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা
দূর্গন্ধ আর রোগীর ভীড়ে
খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা
সেবা নেই বলেই চলে।
ডায়রিয়া
বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস
জানান, গত তিন দিনে
৩ শতাধিক রোগী ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে
ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীরা সবাই বন্যাক্রান্ত এলাকার। শুক্রবার
(৩০ আগস্ট) ডায়েরিয়ায়
আক্রান্ত হয়ে ৩২জন ভর্তি
হলেও পরবর্তী ৩ দিনে গণহারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী
ভর্তি হয়েছে।
তিনি জানান,
১০ জনের বেড তো
খালি নেই। এমনকি মেঝেতেও হাঁটার
জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে
হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালে, কলেরা
স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া অ্যান্টিবায়োটিক
ওষুধের তীব্র সংকট।যা ছিলো, সব রোগিদের সমহারে
বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে
ঔষধ কিনছে। উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার বন্যাক্রান্ত ৪শ আশ্রয়ন কেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ।ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসা দিলেও তা অপর্যাপ্ত। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানীয়রা।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন আহমদ কবির জানান, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানি বাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
দুই
তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ঔষধ
সরবরাহ করা হলে সংকট
নিরসন করা হবে বলে
জানান তিনি।