ডিএনডি বাঁধের ভেতরে জলাবদ্ধতা কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি

গত তিনদিনের ভারি বৃষ্টিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) সেচ প্রকল্পের বাঁধের ভেতরে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট এবং শিল্প-কারখানা, ধর্মীয় উপাসনালয়, স্কুল-কলেজ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ। কারখানার কেমিক্যাল ও বর্জ্যমিশ্রিত কালচে পানি মিশে দুর্গন্ধ ছাড়িয়ে পড়েছে। ময়লা পানির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ডিএনডি প্রজেক্টের খাল ও ক্যানেল খনন করা হলেও ডিএনডির ভেতরের এলাকাগুলো অপেক্ষাকৃত নিচু। সেখানকার পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টানা বৃষ্টির কারণে ফতুল্লার লালপুর, গাবতলী, টাগারপাড়, আফাজনগর, তুষারধারা, গিরিধারা ও মাতুয়াইল মেডিকেলের পেছনসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকা মিলে ডিএনডি সেচ প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ফতুল্লার লালপুর, গাবতলী, টাগারপাড়, আফাজনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে নিচু এলাকা লালপুর, পৌষা পুকুরপাড় ও পাইওনিয়ার গার্মেন্টের পেছনের রাস্তা। এ এলাকাগুলোয় বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানি জমে থাকে। ভারি বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা দুই-তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।

জলাবদ্ধতার কারণে হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফতুল্লায় তিন লক্ষাধিক মানুষের বাস। বৃষ্টিতে এ অঞ্চলে পানি জমলে তা ডিএনডি খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। তবে খালটি আবর্জনায় ভরাট এবং অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল সরজমিনে ফতুল্লার লালপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লালপুর, পৌষা পুকুরপাড়, ক্যানেলপাড়সহ কয়েকটি মহল্লায় পানি জমে রয়েছে। পানি ঠেকাতে অনেকে বাড়ির চৌকাঠে ইটের দেয়াল নির্মাণ করেছেন। কেউ কেউ বালতি ভরে পানি সরাচ্ছেন। ভ্যান গাড়ি বা নৌকায় করে চলাচল করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

বাড়িতে জমে থাকা পানি সরাচ্ছিলেন গৃহিণী আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘লালপুর পৌষা পুকুরপাড় ডিএনডির সবচেয়ে নিচু এলাকা। তাই আশপাশের সব এলাকার পানি এসে পড়ে এখানে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এ বিষয়ে কয়েকবার বলার পরও সমাধান করেননি সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা কোনো স্থায়ী সমাধানে এগিয়ে আসেননি। পানির সঙ্গে অনেকটা সংগ্রাম করেই জীবন ধারণ করতে হয় আমাদের।’

স্থানীয় বাসিন্দা রমিজ উদ্দিনের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনে যে পাম্প বসানো হয়েছে, সেটি দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ছয় ইঞ্চি পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। অথচ ১ ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হলে এলাকায় কয়েক মিলিমিটার পানি জমে যায়। এ কারণে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি নিষ্কাশনে শক্তিশালী পাম্প স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

নৌকাচালক আশরাফ আলী জানান, দুর্গন্ধ ও কালো পানিতে নৌকা চালাতে গিয়ে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। দিনের বেলায় নৌকা বা ভ্যান চলে। কিন্তু গভীর রাতে যদি কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তা হলে পানির মধ্য দিয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়।

ফতুল্লার গাবতলী, টাগারপাড়, পুলিশ লাইনস ও আফাজনগরও তুলনামূলক নিচু। এসব এলাকাতেও মুষলধারে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পানি যেতে পারছে না খালে। আফাজনগর আসাবসিক এলাকাসহ গাবতলী ও টাগারপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অফিস ও স্কুল-কলেজে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আফাজনগরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী শিল্পী আক্তার জানান, বৃষ্টি হলেই আফাজনগর আবাসিক এলাকার শতাধিক ভবনের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। রাস্তা থেকে কিছুটা নিচু হওয়ায় পানি ডিএনডির খালে যেতে পারছে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল। পানিতে ভিজে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হয়।

গাবতলী টাগারপাড়ের বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, ‘পাশে বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসহ শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কয়েক ফুট পানি জমে যায়। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন এবং ডিএনডির উন্নয়নকাজে

নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।’

আরও