শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩

দীর্ঘায়িত নির্মাণকাজ ব্যয় বাড়ছে ১,১৭৭ কোটি টাকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করছে জাপান-কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। চুক্তি অনুযায়ী, সব কাজ শেষ করে টার্মিনালটি গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল ঠিকাদারের। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় দুই মাস আগে শেষ হলেও এখনো কাজ বাকি ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করছে জাপান-কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। চুক্তি অনুযায়ী, সব কাজ শেষ করে টার্মিনালটি গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল ঠিকাদারের। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় দুই মাস আগে শেষ হলেও এখনো কাজ বাকি ৩ দশমিক ১ শতাংশ।  

টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করা হচ্ছে ‘‌হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পের মাধ্যমে। নির্মাণকাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এর ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি থেকে প্রকল্পটির ব্যয় ২২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকায় উন্নীতের প্রস্তাব করেছে বেবিচক। প্রস্তাব অনুমোদন পেলে এর ব্যয় বাড়বে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। 

এ বিষয়ে বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে থার্ড টার্মিনালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে। আর বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির সব কাজ শেষ হতে সময় লাগতে পারে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

তবে এবারই প্রথম নয়, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজের ব্যয় বেড়েছে এর আগেও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয় তখন ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সে সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করেছে বেবিচক। প্রস্তাবটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন বেবিচকের কর্মকর্তারা।

বেবিচক যে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তাতে ৭১৫ কোটি টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার (জিওবি) থেকে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে ঋণ ও জিওবি—দুই খাতেই।

প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও তা থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজের জন্য বাড়ছে না বলে দাবি করেছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ থেকে বিমানবন্দরের অপারেশন টার্মিনাল-৩-এ আনা হবে। টার্মিনাল-৩-এ অপারেশন শুরুর জন্য কিছু কেনাকাটার বিষয় আছে। জনবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। তাই এ প্রকল্পে কিছু অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। এ কাজগুলোর ব্যয় জাইকা বহন করবে। তাই ব্যয় বাড়ার সুযোগ নেই।’

তাহলে প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা কেন বাড়ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‌যেটুকু ব্যয় বেড়েছে তা ভ্যাট ও আইটি খাতে। প্রকল্পের কাজে কোনো ব্যয় বাড়েনি। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে।’

সম্প্রতি সরজমিন টার্মিনাল ভবন ঘুরে ভেতরের সব অবকাঠামো প্রস্তুত অবস্থায় দেখা গেছে। দৃষ্টিনন্দন তিনতলা টার্মিনাল ভবনটির চলন্ত সিঁড়ি, লিফট, এস্কেলেটর, চেকইন কাউন্টার, পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, কনভেয়র বেল্ট, ইমিগ্রেশন ডেস্ক, স্ক্যানারসহ সবকিছুই প্রস্তুত। বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রয়োজন হবে প্রায় চার হাজার জনবল। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ইমিগ্রেশন, কাস্টমসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেয়ার জন্য আরো ২৮-২৯টি সংস্থার জনবল দরকার হবে। জনবল প্রশিক্ষণ ও বিমানবন্দরের সব পরিষেবা সমন্বয়ের কাজগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলোই এখন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেবিচকের কর্মকর্তারা।

এদিকে বাকি থাকা ৩ দশমিক ১ শতাংশ কাজের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন ও টেস্টিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। গত বৃহস্পতিবার টার্মিনালটি পরিদর্শনে গেলে নির্মাণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিষয়টি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক খান বলেছিলেন, ‘এটা হাইলি টেকনিক্যাল একটা কাজ। যতই পরিকল্পনা করেন, সে পরিকল্পনার মধ্যে কোনো এক জায়গায় দেখা যাচ্ছে আরেকটু অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার। আরেকটু উন্নয়ন দরকার। আর বিশ্ব উন্নয়নের পথে নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। আপনাদের এটা মনে রাখতে হবে যে আমরা এখন পর্যন্ত টার্মিনাল যেটা তৈরি করেছি, এটাও কিন্তু খুবই ওয়ান্ডার। এর মধ্যে কভিড গেছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা গেছে। তার মধ্যেও আমরা কিন্তু প্রায় সময়মতো কাজ শেষ করতে পারছি। আশা করছি এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথমে এটা পুরোদমে শুরু করতে পারব।’ 

আরও