বন্যার পর এবার ভাঙনের কবলে ফেনীর কালিদাস পহালিয়া নদী

ভয়াবহ বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফেনীর অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ। এরই মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদীতে।

ভয়াবহ বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফেনীর অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষ। এরই মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদীতে। ঘর-বাড়িসহ জনপদ বিলীনের আশঙ্কায় ১২০টি পরিবারে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ভাঙন রোধে নদীপাড়ে ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের উত্তর নেয়ামতপুর গ্রামে বন্যার পানি নেমে গেলেও ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে। রাস্তাঘাট বেহাল। মনির উদ্দিন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দারা বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া কাপড়চোপড় শুকাতে ব্যস্ত। এর মধ্যেও সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। কারণ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কালিদাস পাহালিয়া নদী। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙন রোধে ফেলা ব্লক ও জিও ব্যাগ পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছে সেখানকার ১২০টি পরিবার।

মনির উদ্দিন ভূঞা বাড়ির বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই মালদ্বীপ প্রবাসী। কয়েকদিন আগে ঘরে হাঁটুপানি ছিল। এখন হঠাৎ বাড়ির পাশে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে পরিবার নিয়ে অকেটা আতঙ্কে রয়েছি।’

জাহাঙ্গীর আলম নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও ঘরে চার ফুট পানি ছিল। এখন ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে আমরা কোথায় যাব। ভাঙন ঠেকাতে দুই-একদিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা জরুরি।’

কলেজছাত্র আহনাফ আতিক জানান, বসতঘর থেকে সাত ফুট দূরত্বে চলে এসেছে কালিদাস পাহালিয়া নদী। এখনই পদক্ষেপ না নিলে শতাধিক ঘরবাড়ি ও মসজিদ বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি।

নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, উত্তর নেয়ামতপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লেমুয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে ছনুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ টংগীরপাড়ে কালিদাস পাহালিয়া নদের তীরঘেঁষে নির্মাণ করা অন্তত ৫০টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। আরো শতাধিক ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

পেশকার বাড়ির রাকিব আফসার জানান, অন্তত ৫০টি ঘর এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে। শতাধিক ঘর এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

আলী আজ্জম মোল্লা বাড়ির আরমান জানান, তাদের পেছনে অন্তত ১৫ ফুট জমি নদী বিলীন হয়ে গেছে। ক্রমেই ভাঙন ঘরের দিকে এগোচ্ছে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নেয়ামতপুর, টংগীরপাড় ও লেমুয়া ব্রিজসংলগ্ন স্থানে ভাঙনের দৃশ্য দেখেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে।’

আরও