পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘গত ২০-২৫ বছরে গণমাধ্যমের মালিকানা কাদের হাতে চলে গেছে? যারা আসলে সংবাদ নিয়ে আগ্রহী, যারা আসলে মানুষকে তথ্য দিতে চায়, এমন মানুষের হাতে সংবাদপত্র নেই। তারা নিজেদের ব্যবসাকে ঠিক রেখে অন্যের ব্যবসাকে আক্রমণ করার জন্য সংবাদপত্র বা টেলিভিশন খুলেছে।’
গতকাল প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) গণমাধ্যমবিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের উদ্যোগে পিআইবির সঙ্গে সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ। ‘ভুল তথ্য ও অপতথ্যের যুগে গণমাধ্যম: চ্যালেঞ্জ, দায়িত্ব ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া’ শিরোনামে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ইরাকে যখন যুদ্ধ শুরু হলো, তখন গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যম অনেক প্রচার করল। এখন আবার জলবায়ু পরিবর্তন যখন বৈজ্ঞানিকভাবে একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং আমরা প্রত্যহ এটার মুখোমুখি হচ্ছি, তখনো জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতিসৃষ্ট না মনুষ্যসৃষ্ট, এটাও বলা হচ্ছে। আমরা সবাই মনে করেছিলাম যে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে অনেক উন্নতি হয়ে গেছে এবং আমরা উন্নতির মহাসড়কে চলে গিয়েছি। ১৫টা বছর আমরা কত রকমের তথ্য বিশ্বাস করেছিলাম, এখন জানছি এগুলো ভুল। আবার এখন কেন এত অপপ্রচার হচ্ছে? এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ন্যস্ত স্বার্থকে সুরক্ষা করা।’
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘ভুলতথ্য, অপতথ্য বা কুতথ্য মোকাবেলায় বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুব সীমিত কাজ হচ্ছে। এখন এত ব্যাপক আকারে কুতথ্য বা অপতথ্যের সুনামি শুরু হয়েছে, এটা মোকাবেলা করার জন্য শুধু ব্যক্তি উদ্যোগ বা সীমিত উদ্যোগে কাজ হবে না।’
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘বিগত আমলে সরকারিভাবেই জনসংখ্যা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি বা খাদ্যের উৎপাদন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই সরকারিভাবে ভুল তথ্য বা বাড়িয়ে বলা তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সেটারই একটা অংশ হচ্ছে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এ ধরনের ফ্যাব্রিকেটেড ডাটা (কারসাজিমূলক তথ্য) ব্যবহার করে যে উন্নয়নটা দেখানো হলো, সেটার খেসারত কে দেবে?
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যপক মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্ষমতার বাইরে যারা থাকে, তাদের দিক থেকেই বেশি ভুল বা অপতথ্য ছড়ানো হয়।’
সেমিনারে অন্যদের মাঝে আরো কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দ্বীন এম সুমন রহমান প্রমুখ।