চীন সফরে প্রায় দুইশ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দেখা করবেন ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের সফরে আগামী বুধবার চীনে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি দেশটির প্রায় দুইশ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দেখা করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের সফরে আগামী বুধবার চীনে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি দেশটির প্রায় দুইশ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দেখা করবেন। এ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, ‘চীন সফরে স্যার (ড. ইউনূস) অনেকগুলো ব্যবসায়ী টিমের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন।’ রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূসের এ সফরে চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি কোনো একটা দেশে বিনিয়োগের জন্য যাওয়ার দরকার পড়ে, প্রাথমিক উৎস হিসেবে সেটি অবশ্যই চীন হতে পারে। রাষ্ট্রীয় সফর হলেও প্রধান উপদেষ্টা এ সফরে সে দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন। বড় বড় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানকার অনেকগুলো ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে স্যারের সঙ্গে প্রায় দুইশ বিনিয়োগকারীর দেখা হবে। আশা করা হচ্ছে, এতে বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

বাংলাদেশে চীন বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘চাইনিজ বিনিয়োগ এখন আমাদের জন্য বড় একটি নাম্বার। কিছু সুনির্দিষ্ট শিল্পে তারা আগ্রহী হচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমরা এফডিআই হিটম্যাপ করেছিলাম। সেখানে দেখতে চেয়েছিলাম, আমাদের দেশে সম্ভাবনা কোথায় সবচেয়ে বেশি। আর যদি চাইনিজ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করি তাহলে দেখা যায় যে অ্যাডভান্স টেক্সটাইলে তাদের আগ্রহ রয়েছে। টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ইলেকট্রনিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং জায়গাগুলোয় তারা আগ্রহী হবেন।’

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এখানে বেশকিছু জটিলতা ছিল। সেগুলো আমরা এরই মধ্যে খুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। চীনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে একটা অ্যাগ্রিমেন্ট সই হবে। এটার একটা ঘোষণা সামনের কয়েক মাসের মধ্যেই দেখতে পাব। চীনের ওই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আসার জন্য দেশটির বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানকার নির্মাণকাজ যখন শুরু হবে, আশা করছি দ্রুত সেখানে চীনা বিনিয়োগের ঘোষণা দেখতে পাব আমরা।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। শুল্ক বাড়ানোয় এখন চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন জানিয়ে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘তারা এখন বাংলাদেশে এসে অন্তত একটা শিল্প-কারখানা গড়তে চান।’

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চীনের বিনিয়োগের বিষয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পিভি প্যানেল কারখানা গড়তে চান চীনা বিনিয়োগকারীরা। সেগুলো এ দেশে উৎপাদন করে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে চান।’

এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘এটি খুবই সফল, ফলপ্রসূ এবং একটি মাইলফলক সফর হবে; যেখানে কিছু ঘোষণা আসতে পারে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। এখনো আলোচনা করছি। অপেক্ষা করুন এবং দেখুন।’

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ সফর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ দুটি দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে।’

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ সফরের সময় কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হবে না। তবে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী বুধবার চীনের উদ্দেশে রওনা হবেন। পরদিন তিনি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং চীনের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ২৮ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ড. ইউনূসকে ২৯ মার্চ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও