বরগুনায় ঋণের বোঝা বাড়ছে জেলেদের

মাছের বংশ বিস্তার ও পোনা বেড়ে ওঠা নির্বিঘ্ন করতে ২০ মে থেকে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।

মাছের বংশ বিস্তার ও পোনা বেড়ে ওঠা নির্বিঘ্ন করতে ২০ মে থেকে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে এ সময়ে নিবন্ধিত জেলেদের ৮৬ কেজি চাল দেয়া হবে। এ সহায়তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন জেলেরা। সংসারে আরো অনেক খরচ আছে। বেকার এ সময়ে তেমন কাজ থাকে না। কেউ কেউ ৩০০-৪০০ টাকা মজুরিতে ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। তা দিয়ে দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো কঠিন। অনেকে আগের ঋণই শোধ করতে পারেনি। কাজের সন্ধান না পেলে নতুন করে ঋণের বোঝা বাড়বে তাদের।

মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ২০১৫ সাল থেকে এ নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন দরকার আছে কিনা, তা বৈজ্ঞানিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। কারণ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১৫ এপ্রিল থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত। দেশে এ সময়সীমা ১ মে থেকে ৩০ জুন করা হলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে।

বরগুনা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৭ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে বরগুনা সদরে ৮ হাজার ৯২২ জন, আমতলীতে ৭ হাজার ৮৫৪, বামনায় ৯০১, বেতাগীতে ৪ হাজার ১৩৪ ও পাথরঘাটায় ১৪ হাজার ১৭৬ জন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের দিন কষ্টে কাটবে। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে ভালো হয়। এ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা দরকার।’

পোটকাখালী ট্রলার পাড়ায় দেখা যায় দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরিতে ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন অনেকে।

এ সময় আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি পলাশ হাওলাদার বলেন, ‘ট্রলারে কাজ করে গত বছর ১ লাখ টাকা ঋণ হয়েছি। তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিশোধ তো দূরের কথা, ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে।’

জেলে আবুল কালাম বলেন, ‘সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর ঋণ নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগতে হচ্ছে। মহাজনের দাদনের টাকাও বা কীভাবে পরিশোধ করব। সরকার যে চাল দেয় তাতে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলে না।’

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিবন্ধিত জেলেদের ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি চাল দেয়া হবে। নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কাজ চলছে। এছাড়া সরকারিভাবে অন্য কোনো সহায়তা বৃদ্ধি করলে তা আমরা জেলেদের কাছে পৌঁছে দেব।’

জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার ২৭ হাজার ২৫০ জেলের জন্য ১ হাজার ৫২৬ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। চাল বিতরণে ১৬ মে জেলা টাক্সফোর্সের সভাও শেষ হয়েছে।’

আরও