উপযোগিতা হারাচ্ছে বিদ্যমান নীতি

নতুন ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলের খোঁজে সরকার

বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের ঋণের চিত্র ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। স্থানীয় ও বিদেশী দুই উৎস থেকেই বাড়ছে ঋণ নেয়ার পরিমাণ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদ পরিশোধের ব্যয়ও। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে টানাটানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। অর্থ সংকটের কারণে সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড

বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের ঋণের চিত্র ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। স্থানীয় ও বিদেশী দুই উৎস থেকেই বাড়ছে ঋণ নেয়ার পরিমাণ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুদ পরিশোধের ব্যয়ও। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আয় হচ্ছে না। পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে টানাটানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। অর্থ সংকটের কারণে সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর ফর্মুলায় যেতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ঋণ ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিদ্যমান নীতি ক্রমেই উপযোগিতা হারাচ্ছে। তাই নতুন করে কৌশল প্রণয়ন করতে চাইছে সরকার। আর এ কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করতে এ মাসেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ কারিগরি টিম বাংলাদেশে আসছে। 

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দুটি মধ্য মেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করেছে। প্রথমটি করা হয় ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর মেয়াদের জন্য। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জন্য প্রণয়ন করা হয় দ্বিতীয় ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল, যার মেয়াদ আগামী জুনেই শেষ হচ্ছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ডলার ও টাকার সংকটের কারণে বর্তমানে সরকারের মূল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণ ব্যবস্থাপনা। আবার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সচল রাখতে ঋণ নিতেই হবে। অন্যদিকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর ছাড়কৃত হারে ঋণ পাওয়ার সুযোগও বাংলাদেশের জন্য কমে আসবে। ছাড়কৃত হারে ঋণ প্রাপ্তির পরিমাণ এখনই কমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রতি বছরের বাজেটের সঙ্গে তৈরি করা হবে ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল। এদিকে ১৮ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করবে। ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করবে দলটি।

বর্তমানে সরকারের যে মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল রয়েছে সেখানে চার ধরনের কৌশলের কথা বলা হয়েছে। প্রথমটির মধ্যে রয়েছে বিদেশী উৎসের তুলনায় স্থানীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নেয়া। এক্ষেত্রে বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণের মাধ্যমে সরকারের ২৬ শতাংশ ব্যয় মেটানোর কথা বলা হয়েছে। বাকিটা আসবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ সঞ্চয়পত্র ও ২০ শতাংশ আসবে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে। ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ কৌশল নেয়ার কথা বলা হয়। 

দ্বিতীয় কৌশলের মধ্যে রয়েছে বিদেশী উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো। এ পদ্ধতি অনুসারে সরকার তার মোট অর্থায়ন চাহিদার ৩৬ শতাংশই পূরণ করবে বিদেশী ঋণের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে অর্থায়ন ৫ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ছাড় ও আংশিক ছাড়ে বিদেশী ঋণ বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তৃতীয় কৌশলেও এসেছে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ বাড়ানোর কথা। তবে এতে আংশিক ছাড়ে পাওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে ছাড়ের তুলনায় আংশিক ছাড়ের বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেশি হবে। দ্বিতীয় কৌশলের মতো এক্ষেত্রেও ৩৬ শতাংশ অর্থায়ন চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে বিদেশী উৎস থেকে।

চতুর্থ কৌশলের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে বড় ধরনের সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র দিয়ে সরকারের অর্থায়ন চাহিদা পূরণের পরিমাণ ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমেও অর্থায়ন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে এ কৌশলে। এর বিপরীতে বাড়বে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়ন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের অর্থায়ন চাহিদার ৪৯ শতাংশই আসবে এর মাধ্যমে। অন্যদিকে এক্ষেত্রে প্রথম কৌশলের মতো ২৬ শতাংশ অর্থায়ন আসবে বিদেশী ঋণ থেকে।

কোন ধরনের কৌশল অবলম্বন করা সরকারের জন্য সুবিধাজনক হবে সে বিষয়েও মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে সুপারিশ রয়েছে। এতে দেখা যায়, ঝুঁকি বিবেচনায় দ্বিতীয় কৌশলটি প্রান্তিকভাবে ভালো পারফর্ম করলেও দীর্ঘমেয়াদের জন্য এটি জুতসই হবে না। বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে তৃতীয় কৌশলটিও সুবিধাজনক হবে না বলে মত দেয়া হয়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম কৌশল পরিবর্তন এবং দ্বিতীয় কৌশলের সুবিধা নেয়া হয়ে গেলে চতুর্থ কৌশলটিই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে লাভজনক হবে বলে মত দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দেশের সামষ্টিক-আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা ও অভ্যন্তরীণ ঋণের বাজারের গভীরতা বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের বাজেট ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় উৎস থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা ও বিদেশী উৎস থেকে ৬৫ হাজার ৬৬ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে স্থানীয় উৎস থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা ও বিদেশী উৎস থেকে ৭৬ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৯ শতাংশ। স্থানীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা ও ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে নেয়া ঋণের পরিমাণ। আলোচ্য দুই অর্থবছরে সরকারকে ঋণের বিপরীতে বড় অংকের সুদও পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাজেটের কাঠামোর সঙ্গে মিল রেখেই ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করতে হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এসব ক্ষেত্রে বেশকিছু সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের সমন্বয়ে একটি রূপরেখা দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু এগুলো বাস্তবে পরিণত করার জন্য যেসব নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে খুব বেশি মনোযোগ দেয়া হয় না। মুদ্রানীতি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা এগুলোর সবক’টিই ঋণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসি করলে হবে না। কভিডের পর থেকে আমাদের ঋণ-জিডিপির অনুপাত বাড়ছে এবং এর পরিমাণ ৪০-৪২ শতাংশের মতো। আইএমএফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বেশি হলে বিপদ আছে। এখন আমরা কি ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেব নাকি ৪৪-৪৫ শতাংশের মধ্যে সেটি সীমাবদ্ধ রাখব সেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এটি করতে গেলে সেক্ষেত্রে আমাদের বাজেট ঘাটতি কেমন হবে, সে ঘাটতি মেটাতে রাজস্বের ক্ষেত্রে কী সংস্কার করতে হবে, ব্যয়ের ক্ষেত্রে কী নীতি সংস্কার প্রয়োজন, বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার এগুলোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। আর এ কর্মপরিকল্পনা প্রতি বাজেটের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে স্থানীয় উৎসের তুলনায় বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া যে পরিমাণ ঋণ বেড়েছে তা গত অর্থবছরে সরকারের আহরিত রাজস্বের প্রায় ৮৩ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন সরকার ঋণের টাকায় ঋণ পরিশোধ করছে এবং ঋণের এ উল্লম্ফন দেশের অর্থনীতিতেও ঝুঁকি তৈরি করছে।

অন্যদিকে আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৩৩৩ কোটি (২৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ পরিশোধ করেছে। আলোচ্য অর্থবছরের প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ৯৯ টাকা ৪৫ পয়সা ধরে এর পরিমাণ ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ডলারের (১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন) অভ্যন্তরীণ ঋণ ও ৩৮৯ কোটি ডলার (৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন) বিদেশী ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৬৬ কোটি (১৬৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন) ডলারে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার (৯২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ও বিদেশী ঋণ ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার (৭৪ বিলিয়ন)। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদ যেমন ৫ কিংবা ১০ বছরের জন্য কৌশল প্রণয়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি বছরই বাজেটের সময় এ কৌশলকে হালনাগাদ করতে হবে। যাতে করে আগের অর্থবছরে যেসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার সম্ভব হয়নি সেগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য কৌশল গ্রহণ করা যায়। একইভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঋণ ব্যবস্থাপনা কীভাবে করতে হবে সেজন্য প্রতি বছর এটি হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি ডলার ও টাকার অংকের তথ্য থাকতে হবে, যাতে করে মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রভাব বোঝা যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে গত দুই বছরে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও সরকারের আর্থিক সংকটের মতো বিষয়গুলো অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ঋণ ব্যবস্থাপনার কৌশল অনেক ক্ষেত্রেই উপযোগিতা হারিয়েছে। দেখা যাচ্ছে সরকার স্থানীয় উৎস বিশেষ করে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার পরিকল্পনা করেছিল, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি ধার করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে অর্থ নিতে হয়েছে সরকারকে। তবে মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিতে পারে এমন শঙ্কায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে সরকার। এর পরিবর্তে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে অর্থ নিচ্ছে সরকার। এতে করে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে গেছে। স্থানীয় উৎস থেকে সরকার বেশি পরিমাণে ঋণ নিলে সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাত চাহিদা অনুসারে ঋণ পাবে না। অন্যদিকে বিনিময় হারে অস্থিরতার কারণে বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রেও সরকারকে হিসাব করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন করে ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাবেক অর্থ সচিব এবং সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধের বিষয়টিও দীর্ঘমেয়াদি। তাই দীর্ঘমেয়াদের কথা চিন্তা করেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অধীনে এটি বাস্তবায়নে কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে সেটি বছর ভিত্তিতে দেখা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতি রেখে আমাদেরকে এ কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।’

আরও