আ.লীগ নেতার মামলা, এসপি কার্যালয়ের সীমানা জটিলতা

থমকে আছে কুষ্টিয়া শহর উন্নয়নের চার লেনের কাজ

যানজটমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের মূল সড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় বছর দুয়েক আগে। সড়কের পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্য দুপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। একই সঙ্গে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও প্রশস্ত সড়ক বিভাজকে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কথা রয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মামলা, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জজের

যানজটমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের মূল সড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় বছর দুয়েক আগে। সড়কের পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্য দুপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। একই সঙ্গে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও প্রশস্ত সড়ক বিভাজকে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কথা রয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মামলা, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জজের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর জটিলতায় থমকে আছে সড়কের একটি অংশের নির্মাণকাজ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়লেও সড়ক বিভাগের সময় ক্ষেপণ হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দেন-দরবারেই। 

সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের মূল পয়েন্ট মজমপুর গেট এবং মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত মোট ১০ কিলোমিটার দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। এর মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করা হয় কাজটি। বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার কাজের কার্যাদেশ পায় জহিরুল লিমিটেড আর মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত কাজ পায় স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ব্যয় ধরা হয় ২৮৯ কোটি টাকা। সড়কের দুপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত নির্মাণ ও ডিভাইডারে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনও এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। কাজটি গত বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বরে কাজ শেষ না হওয়ায় ফের চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। 

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নানা জটিলতায় থমকে থাকায় বর্ধিত মেয়াদেও কাজটি শেষ হবে না। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ কাজের ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। মূল শহরের মধ্যে কাজ বন্ধ থাকায় নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দাদের।

সড়ক বিভাগ বলছে, মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী অংশের পাঁচ কিলোমিটারের কাজ আটকে আছে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা জজের বাসভবনের কাছে এসে। নকশা অনুযায়ী সড়কের মাঝে পড়েছে ভবন দুটির সীমানা প্রাচীর। এর মধ্যে ২০২০ সালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়। তবে জেলা জজের বাসভবনের প্রাচীরটি পুরনো। এর বাইরেও সড়কের এ অংশে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারাও বসে আছেন চুপচাপ। আর এসব কারণে নকশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ। নির্মাণ করতে পারছে না পানি চলাচলের ড্রেনও। পুলিশ সুপার কার্যালয় অবশ্য দাবি করছে, নিজেদের জমির ওপরই নির্মাণ করা হয়েছে তাদের সীমানা প্রাচীরটি। 

অন্যদিকে মজমপুর গেট থেকে বটতৈল পর্যন্ত এলাকার কাজে বাগড়া দিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক। বিসিক শিল্পনগরীর সামনে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের জমির মালিকানা দাবি করে বসেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। এ নিয়ে তিনি হাইকোর্টে মামলাও করেছেন। এখন সড়ক বিভাগ ৩০০ মিটার অংশের নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। এসব জটিলতার কারণে নকশা অনুযায়ী ড্রেনের কাজও করা যায়নি এ অংশে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য নেতার (নাম না বলে) নির্দেশে বসা হয়েছিল। এখনো সমাধান হয়নি।’ সড়ক বিভাগ সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, রেজাউল হক প্রকৃত জমির পরিমাণ নিয়ে এমন সব তথ্য দিচ্ছেন সেখানে সমাধান কোনোদিন আসবে বলে মনে হয় না। 

অন্যদিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মালিকানায়। তাই বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার কার্যালয় কোনো কথা বলতে রাজি নয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। তাই অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। 

জেলা জজের বাড়ির সীমানা প্রাচীরটি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেলেও সড়ক বিভাগ বলছে এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। 

এসব জটিলতা নিয়ে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আটকে থাকাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মহল। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার পরিবর্তে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কারণে কাজ আটকে থাকাকে ভালো চোখে দেখছে না সুধী মহলও। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সম্মিলিত সামাজিক জোটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোহাইমিনুর রহমান বলেন, ‘একটি উন্নয়ন প্রকল্পকে আটকে রেখে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। কিন্তু তাদের তো বুঝতে হবে রাষ্ট্রের সব জমিরই মালিক জনগণ। আর জনগণের উন্নয়নে সে প্রকল্প কোনোভাবে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।’   

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান কখনো কখনো নীরব দর্শক হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এ মহল থেকে সে মহলে ছোটাছুটি করে যাচ্ছি। কিন্তু সমাধান মিলছে না।’ এ অবস্থায় তিনি অনেকটাই নিরুপায় বলেও জানান।

আরও