ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র কেওয়াটখালীতে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতুটি প্রায় শতবর্ষ পুরনো। দীর্ঘদিনেও কোনো সংস্কার না হওয়ায় এ সেতু বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। ধীরগতিতে চলাচল করছে ট্রেন। বারবার বলা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ সেতু সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ রেলসেতু সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা বলতে পারেননি কেউ।
স্থানীয়রা জানান, কেওয়াটখালী রেলসেতু নামে পরিচিত সেতুটি ঠিক কত সালে নির্মিত সে রেকর্ড নেই। এলাকাবাসীর ধারণা, শতবর্ষ আগে ব্রিটিশরা যখন রেলপথ চালু করে তখন নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, গৌরীপুর ও ভৈরবের সঙ্গে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার যোগাযোগের জন্য সেতুটি তৈরি করা হয়। ময়মনসিংহ নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কোনো সড়কসেতু ছিল না। তখন ট্রেনের পাশাপাশি পথচারীরা এ সেতু দিয়ে নদ পার হতো। ১৯৯১ সালে নগরীর পাটগুদাম এলাকায় সড়কসেতু চালু হলেও রেলসেতু দিয়ে পথচারী পারাপার অব্যাহত রয়েছে। ফলে পথচারীরা রয়েছেন ব্যাপক ঝুঁকিতে। সেতুটি পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এর ওপর দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচল করতে পারছে না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি এ রেলপথে চলাচলের জন্য ভারী রেল ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য রেলওয়ে ট্র্যাকের ফিটনেস না থাকায় ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যে কারণে এই অঞ্চলে দ্রুতগামী ট্রেন চালু সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন এ সেতুর সংস্কারকাজ না করায় বেশির ভাগ কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে ঝুঁকি তত বাড়ছে। তবু টনক নড়ছে না রেল কর্তৃপক্ষের। তাদের ভাষ্য, কেওয়াটখালী সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি নেই। কিন্তু ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন এ সেতুতে চলতে পারবে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির ৬৬২টি স্লিপারের মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা জরাজীর্ণ। কোথাও ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় নেই পিন, প্লেট। কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের ট্রেনযাত্রীরা।
নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ সেতু মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন সাময়িক মেরামত বা সংস্কার করা হলেও পরে আর তেমন সংস্কার হয়নি।
এদিকে রেলসেতুতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় রাতের আঁধারে লাইনের বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ সেতু দিয়ে সাধারণের যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকলেও শুরু থেকেই অসংখ্য মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। হঠাৎ ট্রেন চলে এলে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কেওয়াটখালীর বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, অবিলম্বে এ সেতু সংস্কারের দাবি জানাই। ময়মনসিংহ বিভাগ নাগরিক উন্নয়ন সমিতির সভাপতি মুফতি শহীদুল্লাহ জানান, পুরনো সেতুটির সংস্কার না হওয়ায় আমরা হতাশ। ময়মনসিংহ এখন বিভাগীয় শহর ও নগর এলাকা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সেতুর সংস্কার জরুরি।
ময়মনসিংহ রেল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বণিক বার্তাকে জানান, সেতুর ওপর দিয়ে বর্তমানে ১৬ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলার অনুমতি রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। দ্রুত সেতুর সংস্কার ও উন্নয়ন হবে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।