চেক নগদায়ন না হওয়ায় ব্যাহত পাইকারি কেনাবেচা

অঞ্চলভেদে ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে। কারণ দেশে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় দাবির সিংহভাগ লেনদেন হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে। ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে দেশব্যাপী ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে। কারণ দেশে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় দাবির সিংহভাগ লেনদেন হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে। ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে দেশব্যাপী ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। আমদানি করা পণ্য সমুদ্রবন্দর থেকে খাতুনগঞ্জে আনার পর তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায়। দেশের ৪০ শতাংশের বেশি ভোগ্যপণ্য সরবরাহ হয় এ বাজার থেকে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে টানা তিনদিন ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। আজ পর্যন্ত সারা দেশে সাধারণ ছুটি থাকার কারণে ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রয়েছে। 

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পণ্যের চেক নগদায়ন হওয়ার কথা গতকাল ও আজ। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ থাকায় প্রতিশ্রুত অর্থ নগদায়ন না হওয়ায় পণ্য সরবরাহ করছেন না ব্যবসায়ীরা। কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাংক খুলবে কিনা সে বিষয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে চেকের মাধ্যমে বাকিতে লেনদেন হয় সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বৃহৎ বাজারগুলোয় না গিয়েও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে পণ্য কেনাবেচা করা যাচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এমনিতে গত সপ্তাহে পণ্য পরিবহন আশানুরূপ হয়নি। ফলে আগের মজুদ পণ্য দিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে মজুদ ফুরিয়ে গিয়ে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যেতে পারে। 

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সারা দেশের পণ্যবাজারে লেনদেন হয় চেকের মাধ্যমে। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পর পণ্য সরবরাহ করা হয়। বৃহস্পতিবার জমা দেয়া চেক গতকাল পর্যন্ত নগদায়ন হয়নি। ফলে চাহিদা থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য সরবরাহ প্রায় বন্ধ রয়েছে। ব্যাংক কবে খুলবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা না এলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে লেনদেন আরো স্থবির হয়ে যাবে।’ 

গতকাল খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা। কিন্তু কেনাবেচা কম। অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করলেও পাওনা পরিশোধ না হওয়ায় লোডিং বন্ধ রেখেছে। এছাড়া খাতুনগঞ্জে কোটি কোটি টাকা বকেয়া রেখে কয়েকজন ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অর্থ পরিশোধের আগে পণ্য সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। 

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক ছাড়া পাইকারি বাজারে লেনদেন প্রায় অসম্ভব। দেশজুড়ে আন্দোলনের কারণে গত সপ্তাহে অর্থ লেনদেন হলেও পণ্য সরবরাহ তেমন একটা হয়নি। এখন কারফিউ জারির পর সংকট এড়াতে কেউ কেউ পণ্য সংগ্রহ করতে চাইলেও লেনদেন পদ্ধতি বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের পাইকারি বাজারগুলো থেকে পণ্য সরবরাহ অনেকে কমে যাবে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যবাজারে লেনদেন পদ্ধতিতে একজন ব্যবসায়ী অন্য অনেক ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভরশীল। একজনকে পণ্য দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে অন্য ব্যবসায়ীকে পরিশোধ করা হয়। কেউ পেমেন্ট দিতে না পারলে পণ্যের লেনদেন আটকে যাবে। খুচরা ব্যবসায়ী কিংবা পাইকারি বাজারসংলগ্ন ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থ এনে পণ্য কিনলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে না।

আরও