মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, শিশুদের সার্বিক কল্যাণ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। তিনি বলেন, শিশুর সামগ্রিক বিকাশ, যত্ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, তাদের শারীরিক, মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করা, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের চাইল্ড কেয়ারে এবং ছয় থেকে দশ বছরের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবন মানের উন্নয়ন, এছাড়াও শিশু যত্ন কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়ন সাধন নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান প্রকল্পের বেজলাইন জরিপ ও নলেজ, অ্যাটিচুড ও প্র্যাকটিস অ্যানালিসিস সার্ভে শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক বাংলাদেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ‘সমাজ ভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান’ (আইসিবিসি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে সুরক্ষিত পরিবেশে শিশুদের নির্ভয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিতে এ প্রকল্পটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, দুর্ঘটনা সমীক্ষায় বিশেষ বিষয় হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশে ১ থেকে ৯ বছরের শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয় যে বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত জলাধারে ও দিনের প্রথম ভাগে। গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার এ হার শহরের চাইতে বেশি, যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে সেখানে পুকুর আর ডোবার মতো ছোট ছোট জলাধারের সংখ্যা বেশি। এজন্য ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৮ হাজারটি সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা। ২ লাখ শিশুকে এ প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদান করা হবে। ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের জন্য ১ হাজার ৬০০টি ভেন্যুতে সাঁতার শেখানো হবে। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্ন প্রদানের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালনের বাইরেও কেন্দ্রগুলো শিশুদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবাদের জন্য শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠবে, খেলার মাধ্যমে ভালোভাবে শেখা, ভালো অনুশীলনগুলোকে সংগ্রহ করে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি বিষয়ক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সুস্থ জাতি গঠন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, গ্লোবাল অর্গানাইজেশন সিনারগোস এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এশা হুসেইন, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস এর জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক কেলি লারসন এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আব্দুল কাদের। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান।
সেমিনারে নীতি নির্ধারক প্রতিনিধি, পানিতে ডোবা প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রকল্পের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, কমিউনিটি প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও শিশুদের জন্য কাজ করে এমন দেশী এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।