ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ সেতু উদ্বোধন ১৯ অক্টোবর

প্রসারিত হবে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ময়মনসিংহ বিভাগে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০টি সেতু।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ময়মনসিংহ বিভাগে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০টি সেতু। এসব সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ প্রসারিত হবে। নাগরিক সুবিধাদি স্বাভাবিক কারণেই বৃদ্ধি পাবে। নগরবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে। বৃদ্ধি পাবে আঞ্চলিক গুরুত্ব। দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অগ্রগতি হবে। নগরায়ণের প্রভাবে গ্রামাঞ্চলগুলো উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শওকত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নির্মিত সেতুর স্থানগুলোর সঙ্গে স্থলবন্দরের অবস্থান থাকায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। সীমান্তসংলগ্ন সেতুগুলো সীমান্তের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করে তুলবে। এর মধ্যে নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা থেকে কলমাকান্দা উপজেলা পর্যন্ত সাতটি সেতু রয়েছে। আবার জামালপুরের ধানুয়া হয়ে রৌমারী পর্যন্ত রয়েছে পাঁচটি সেতু।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সারা দেশে ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাসসহ অন্যান্য উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০টি সেতুরও উদ্বোধন করা হবে। বিভাগের সেতুগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ২৩টি, নেত্রকোনায় ১২টি ও জামালপুর জেলায় পাঁচটি সেতু রয়েছে। সেতুগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭০০ মিটার ও ব্যয় হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কয়েকটি সেতুর সঙ্গে সীমান্ত সড়কের সংযোগ থাকায় দেশীয় প্রেক্ষাপটে এ অবকাঠামোর গুরুত্ব অনেক।

একই দিন ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী সেতু ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণকাজও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কেওয়াটখালী সেতু হবে স্টিল আর্চ। সেতুর স্টিল আর্চ অংশের দৈর্ঘ্য ৩২০ মিটারসহ মোট দৈর্ঘ্য ১১০০ মিটার। সেতুর মূল প্রস্থ হবে ৪২.১৫ মিটার। এছাড়া রহমতপুর সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১৪৭১.৬৫৫ মিটার ও মূল সেতুর প্রস্থ হবে ১৩.৪০ মিটার। এ দুটি সেতু নির্মিত হলে ময়মনসিংহ জেলা সদরসহ নেত্রকোনার বিজয়পুর, শেরপুরের নাকুগাঁও, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের ধানুয়া-কামালপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরগুলোর সঙ্গে রাজধানীর নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের সঙ্গে মূল সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর এ দুটি সেতু ময়মনসিংহের উত্তর অংশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করে তুলবে। স্থলবন্দরগুলোর সঙ্গেও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটবে। রহমতপুর সেতু নির্মিত হলে যানবাহন রহমতপুর হয়ে সরাসরি ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে চলে যাবে।

ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায় বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০টি সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহবাসীর আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব পরিবর্তন হবে। কেওয়াটখালী ও রহমতপুরে দুটি বড় সেতু নির্মাণ উদ্বোধন হবে। সেতুগুলো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সফলতা আসবে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন হবে।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে ময়মনসিংহের জয়রামপাড়া, বগাঝড়া, মাইজপাড়া, রানীপুর, বাকপাড়া, রাংসিনপুর, কড়ইগড়া, নয়াপাড়া, পশ্চিম নয়াপাড়া, দীঘলবাগ, গলুইভাঙ্গা, কান্দাপাড়া, বোরাক, কচুয়াকুড়া, গোবরাকুরা, তেলিখালী, গুমুরিয়া, বুড়াঘাট, মুচিরঘাট, কোদালধর, তারাকান্দা, ফুলফুর ও মনতলা সেতু।

এছাড়া নেত্রকোনার মহিষখলা, বাউসি, নিশ্চিন্তপুর, তেঘরিয়া, গুমাই, আশারানী, বাবনি, ছোট বাবনি, বাহাদুরকান্দা, জিঞ্জিনিয়া, বিশিউরা ও দুর্গাপুর সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জামালপুরের ফুলকারচর, কামালপুর, ধানুয়া, ডিগ্রিরচর ও কদমতলা সেতুও উদ্বোধন হবে একই দিনে।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৯ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০টি সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা ময়মনসিংহবাসী সৌভাগ্যবান। কেবল ময়মনসিংহ জেলা বা বিভাগ নয়, সারা দেশে আজকে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ৪০টি সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহবাসীর অনেক প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

আরও