সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ

হালুয়াঘাট-ধোবাউড়ায় কমেছে টেলিফোন গ্রাহক

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় টেলিফোন লাইনের বেশির ভাগই অকেজো পড়ে রয়েছে।

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় টেলিফোন লাইনের বেশির ভাগই অকেজো পড়ে রয়েছে। হালুয়াঘাট পৌর শহরের উত্তর খয়রাকুড়িতে অবস্থিত টেলিফোন ভবনটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর কার্যক্রম। সংস্থাটির ৫০০ সংযোগের মধ্যে সেখানে চালু রয়েছে শতাধিক সংযোগ। ধোবাউড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত টেলিফোন অফিসের অবস্থাও নাজুক। সেখানে নামমাত্র একটি সংযোগ রয়েছে। অন্য সব অচল। সেবার মান ভালো না হওয়ায় গ্রাহক টেলিফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

হালুয়াঘাট টেলিফোন অফিসের তথ্যমতে, পৌর শহরের উত্তর খয়রাকুড়ি টেলিফোন ভবন থেকে উত্তর বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এর কার্যক্রম। বর্তমানে ১০০ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি অফিসের সংযোগ রয়েছে ৪০টি ও ব্যক্তিগত সংযোগ রয়েছে ৬০টি। ৩০টি সংযোগ নিয়ে ইন্টারনেট সেবা চালু করলেও বর্তমানে আটটি লাইন সক্রিয়। ব্যক্তিগত সংযোগও অনেকে ব্যবহার করছেন না।

হালুয়াঘাট টেলিফোন অফিস দেখে মনে হয় এটি পরিত্যক্ত ভবন। ছাদের পলেস্তারা উঠে গিয়ে রড বেরিয়ে গেছে। রঙ করা হয় না দীর্ঘদিন। ভবনে কাজ করেন একজন মাত্র লাইনম্যান। টেলিফোন বিকল হলে বা সংযোগের সমস্যা হলে মেরামতেও সময় লাগে।

জানা যায়, ১৯৯০ সালে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় টেলিফোন সংযোগ চালু হয়। এনালগ পদ্ধতিতে ১৯৯৬-৯৯ সাল পর্যন্ত ১০০টি লাইন সক্রিয় ছিল। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে পেতে থাকে টেলিফোন সেবা। এনালগ থেকে সিভি স্যান্টাল ব্যাটারি সিস্টেমের মাধ্যমে উন্নত হতে থাকে টেলিফোন সেবা। ১৯৯৯-০৪ সাল পর্যন্ত উপজেলায় সংযোগ বেড়ে দাঁড়ায় ২০০টি। ২০০৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত উপজেলায় ৫০০টি সংযোগ ছিল। পৌর শহরের সীমানা ছাড়িয়ে টেলিফোন সেবা পৌঁছে গিয়েছিল সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধারা বাজার পর্যন্ত। মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া লাইনে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংযোগ লাইন কিছুটা ভালো ছিল।

হালুয়াঘাট টেলিফোন অফিসের লাইনম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে এখানে কর্মরত। তৎকালীন ঠিকাদার যে লাইন মাটির নিচ দিয়ে দিয়েছিল, সেটির পয়েন্ট থাকার কথা ছিল ছয়টি। কিন্তু নিম্নমানের চারটি পয়েন্টের তার সেখানে ব্যবহার করা হয়। ফলে ২০১৩ সালের পর থেকেই মাটির নিচের সংযোগ লাইনে ত্রুটি দেখা দিতে থাকে। এ কারণে ধারা বাজারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গ্রাহকসেবা ঠিকমতো দিতে না পারায় কমতে থাকে সংযোগ। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্রাহক ছিল ১৬৬ জন। বর্তমানে গ্রাহক রয়েছেন ১০০ জনের মতো।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে ইন্টারনেট সেবা টেলিফোন অফিসে চালু হলেও আমরা ২০২৩ সাল থেকে এ সেবা উপজেলায় চালু করেছি। প্রথমে ৩০ জন গ্রাহক ছিলেন। কিন্তু গতি কম থাকায় গ্রাহকও কমে যায়। বর্তমানে আটজন গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন। হালুয়াঘাট টেলিফোন অফিসে বর্তমানে দুজন লাইনম্যান রয়েছেন।’

ধোবাউড়া উপজেলা টেলিফোন অফিস ভবনের অবস্থাও নাজুক। এর দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান নূর ইসলাম জানান, এ উপজেলায় টেলিফোনের সব সংযোগ বিকল। একটি মাত্র সংযোগ আছে নির্বাচন অফিসে। এছাড়া অন্য কোথাও টেলিফোন সংযোগ নেই। যদিও সেই সংযোগটিও বেশির ভাগ সময় নষ্ট থাকে। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত ১০০ জনের মতো গ্রাহক ছিলেন। উপজেলার পাঁচটি সরকারি অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। আগে টেলিফোন, তারসহ অনেক সরমঞ্জাম অফিস থেকে পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা বন্ধ। সেবার মান খারাপ থাকায় গ্রাহকশূন্য এ সংস্থাটি।’

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ টেলিফোন অফিসের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল মফিজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা মাটির নিচে উন্নতমানের ফাইবার তার দিয়ে টেলিফোন লাইন দেয়ার ব্যবস্থা করছি। এটি শেষ হলে টেলিফোন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।’

আরও