আগারগাঁওয়ের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত শেষে সবাইকে নিয়ে বের হয় এক বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল। মোগল যুগের সেই বাদশাহি আমেজ কিংবা রীতি-রেওয়াজ না থাকলেও শিশু, তরুণ আর প্রবীণদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত ছিল এ শোভাযাত্রা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রথমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত শুরু হয়। জামাতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জামাতের পর সবাইকে নিয়ে বের হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল। মিছিলটি আগারগাঁও থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, ঈদের জামাতের জন্য পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য কার্পেট রাখা হয়। জামাত শুরুর আধ ঘণ্টা আগে সকাল ৮টার দিকে নির্ধারিত প্যান্ডেল মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর পর যারা আসেন, তারা খোলা মাঠে নামাজে অংশ নেন।
ঈদ আনন্দ মিছিলে ব্যান্ডের বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে হইহল্লোড় করে আনন্দমুখর পরিবেশে নানা বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তাসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক’ বলে আনন্দধ্বনি তোলে। মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরো ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাসসংবলিত ১০টি পাপেট শো। আনন্দমিছিল থেকে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেয়া হয়। মিছিলটি খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়।
আনন্দ মিছিল শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে শিল্পীরা ঈদের দর্শকপ্রিয় গান ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি পরিবেশন করেন। এর পর ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো শিল্পীরা পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ সময় সাধারণ মানুষকে সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখা গেছে, সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ডিএমপি, সিটিটিসি, সোয়াটসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। অনুষ্ঠানস্থলে হাজার হাজার মুসল্লি উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা গানে গানে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন। ঈদ উৎসবে সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
আনন্দ মিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করেছে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সবার। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগই নেয়া হয়েছে।’
এ জামাত ও আনন্দ মিছিলে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল, সেটা হয়তো কয়েকশ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতি বছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদযাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবে।’