রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা, সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তনসহ সংস্কার কমিশনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে দ্বিমত প্রকাশ করেছে বিএনপি। জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে দলটি এসব বিষয়ে লিখিত মতামত জানিয়েছে। পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব বিষয়ে জানান।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে দলটির মতামত জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাব, যেটা প্রি-অ্যাম্বল নামে সবাই চেনে। এখানে ওনারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে একই কাতারে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে নিয়ে এসেছেন, যেটা আমরা মনে করি সমীচীন নয়। আগের প্রি-অ্যাম্বলেই থাকা উচিত। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের অংশটি সংবিধানের অন্য জায়গায় কীভাবে রাখা যায় সেটা পরে আলোচনা করা যেতে পারে।’
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই শপথ নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এ সরকার বৈধ। তার পরও বৈধতার সন্দেহ থাকলে পরে যখন অনেকগুলো ভেরিফিকেশন আসবে তখন অ্যাকোমোডেট করা যাবে।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আগের অবস্থায় বহাল রাখা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখতে মতামত জানিয়েছে বিএনপি। সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমানোর কথা বলা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় হলো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। যদি এনআইডি একটি পৃথক স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে এনআইডি-সংক্রান্ত সব সহায়তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বারবার ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হবে। আমরা মনে করি, এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, গণভোট নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হওয়া উচিত। সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।’
এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার নিয়ে গতকাল লিখিত মতামত দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পরে সাংবাদিকদের দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গে সিপিবি একমত। অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমতও রয়েছে। অনেকগুলো প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব আছে আমাদের লিখিত মতামতে। অনেকগুলো প্রস্তাব একেবারেই নাকচ করে দেয়ার আছে।’
সুপারিশের ১৬৬টি প্রশ্ন প্রকারান্তরে অনেক কিছু অস্পষ্ট উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেক কিছু যদি শুধু “হ্যাঁ/না”-এর মধ্যে থাকি, তাহলে পুরো যে সংস্কার প্রস্তাব, সেটা একটা ভুল বোঝাবুঝির জায়গায় যাবে। সংস্কারের মূল দায়িত্ব জনগণের। এটি তাদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।’