টঙ্গী ইজতেমা ময়দান

তাবলিগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৪ আহত শতাধিক

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তুরাগ নদের তীরে গতকাল বিশ্ব ইজতেমা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ এবং সব ধরনের সমাবেশ ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

সংঘর্ষে নিহতরা হলেন বাচ্চু মিয়া (৭০), তাইজুল (৬৫) ও বেলাল (৬০)। অপর একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহত বাচ্চু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দুর গ্রামে। বেলালের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণখানে ও তাইজুল ইসলাম বগুড়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। নিহতরা সবাই তাবলিগ জামাতের জুবায়ের অনুসারীদের সাথি বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার আগে আগামীকাল থেকে পাঁচদিনের জোড় ইজতেমা করার জন্য মাওলানা সাদ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে তারা যেন প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য আগে থেকেই ময়দানে অবস্থান নেন জুবায়েরপন্থীরা। এর মধ্যে গতকাল ভোরে সাদ অনুসারী শত শত মুসল্লি কামারপাড়া সেতু পার হয়ে বিদেশী নিবাসের গেট দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করতে থাকেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় পক্ষের বেশকিছু মুসল্লি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সংঘর্ষের পর থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও ইজতেমা ময়দানের আশপাশে মোতায়েন রয়েছেন।’

এদিকে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খানের স্বাক্ষর করা গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৮ ডিসেম্বর বেলা ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় জনসাধারণের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হলো। এ সময় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা, জমায়েত এবং কোনো মিছিল-সমাবেশ করতে পারবেন না। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনস ২০১৮-এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ আদেশ দেয়া হলো।

গণবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো প্রকার অস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য বা এ-জাতীয় কোনো পদার্থ বহন করা যাবে না। এছাড়া কোনো প্রকার লাউড স্পিকার বা এ-জাতীয় কোনো যন্ত্র দিয়ে উচ্চ স্বরে শব্দ করতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ নিষেধাজ্ঞা জারির পর গতকাল দুপুরের দিকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ থেকে ফিরে যেতে শুরু করেন মুসল্লিরা। জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) নুর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ময়দান ও আশপাশে কোনো জমায়েত করা যাবে না। কোনো ধরনের মাইক ব্যবহারও করা যাবে না।’

এদিকে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে গতকাল তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের (জোবায়ের ও সাদ) সঙ্গে বিশেষ আলোচনা সভা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এতে ছাড় দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। খুনিদের তো কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। যারা প্রকৃত দোষী তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

সাদপন্থীদের ইজতেমা করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের ভেতরে একটা আলোচনা হচ্ছে। তারা যদি আলোচনা করে একটা সমাধানে আসতে পারে...। তারা আলোচনা করার পর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব। তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপকে অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে এসে ছাড় দিতে হবে। তবেই আমরা একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল বিশ্ব ইজতেমা উপহার দিতে পারব।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূমি উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী প্রমুখ।

আরও