কোরবানিতে ‘খাইটে’র চাহিদা বেড়েছে

আগামী বৃহস্পতিবার পালন হবে ঈদুল আজহা। এ ঈদে পশু সংগ্রহ, জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে ব্যস্ততা থাকে সবার। এ কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ হচ্ছে পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণ। পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় উপকরণ লাগে, তার মধ্যে অন্যতম কাঠের পাটাতন ‘খাইট্টা’ বা ‘‌খাইটে’, যা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি। ঈদুল আজহাকে ঘিরে সারা দেশে কয়েক লাখ টুকরো

আগামী বৃহস্পতিবার পালন হবে ঈদুল আজহা। এ ঈদে পশু সংগ্রহ, জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে ব্যস্ততা থাকে সবার। এ কাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ হচ্ছে পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণ। 

পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় উপকরণ লাগে, তার মধ্যে অন্যতম কাঠের পাটাতন ‘খাইট্টা’ বা ‘‌খাইটে’, যা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি। ঈদুল আজহাকে ঘিরে সারা দেশে কয়েক লাখ টুকরো খাইটে তৈরি হয়ে থাকে। কোরবানি করা পশুর পরিমাণ হিসেবে যার আর্থিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। 

এলাকাভেদে কোথাও এটাকে বলে খাইট্টা, কোথাও খটিয়া, খাইটে, গুঁড়ি, শপার, হাইজ্যা ইত্যাদি। তবে দেশজুড়ে ‘খাইট্টা’ বা ‘‌খাইটে’ শব্দটিই বেশি ব্যবহৃত। 

সারা বছর কসাইখানায় এ খাইটের ব্যবহার অতি সাধারণ হলেও ঈদুল আজহায় গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্র এর চাহিদা তুঙ্গে। ঈদে জবাই করা বিপুল পশু প্রক্রিয়া করতে প্রচুর পরিমাণ কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে। সাধারণভাবে কোরবানির পশুর সঙ্গে এ গুঁড়িও সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। 

একটি গরু প্রক্রিয়াকরণ করতে প্রায় দু-তিনটি গুঁড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে। একটি ছাগলের জন্য অবশ্য একটি খাইটে হলেই চলে। 

সরেজমিন কুষ্টিয়া শহরের আশপাশের কয়েকটি স মিলে গিয়ে দেখা যায় এ গুঁড়ি তৈরি হচ্ছে। লোকজন দেদার কিনছেন। দাম-দর খুব একটা করতে দেখা যাছে না। দাম প্রায় নির্ধারিত। 

স মিলের মালিকরা জানান, মাংস কাটার কাজে কাঠের এ গুঁড়ির বিকল্প নেই। এটি বাংলাদেশের আবহমানকালের একটি ঐতিহ্য। সারা বছরই এর চাহিদা থাকে। কসাইয়ের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এটি ক্রয় করে থাকেন। তবে ঈদে এ চিত্র ভিন্ন। এ সময়ে যারা কোরবানি দিয়ে থাকেন তারা এটি সংগ্রহ করে থাকেন। 

কুষ্টিয়া শহরের চাঁদাগাড়ি এলাকার ভাই ভাই স মিলের মালিক মাহবুবর রহমান দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে স’ মিলের ব্যবসা করছেন। অন্য কাঠ চেরাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ খাইটে বানিয়ে থাকেন। তিনি জানান, তেঁতুল গাছের কাঠ দিয়েই খাইটে বানাতে হয়। কারণ মাংস কাটতে যে চাপাতি ব্যবহার হয় তা অত্যন্ত ধারালো। তেঁতুল কাঠে সহজে চাপাতির কোপ বসে না। তাই কাঠের গুঁড়াও উঠবে না। এতে মাংস নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মাহবুবর জানান, তার স মিলে সারা বছরই এ গুঁড়ি তৈরি করা হয়। পেশাদার কসাইরা তার কাছ থেকে গুঁড়ি নিয়ে থাকেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে স মিলে তিনি প্রায় পাঁচ শতাধিক খাইটে তৈরি করেন। প্রায় পুরো শহরের চাহিদার বেশির ভাগ তিনিই মেটান। তবে এ সময়ে প্রায় সব স মিলেই এ খাইটে তৈরি হয় বলে তিনি জানান। 

মাহবুবর হিসাব দিলেন, গত বছর তিনি প্রতিটি সাধারণ মানের গুঁড়ি বিক্রি করেছেন ৪০০-৪৫০ টাকায়। এর সঙ্গে ১০০-১৫০ টাকার প্রসেসিং চার্জ। তবে এবার খাইটের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৫০-৬৫০ টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে প্রসেসিং চার্জ। একটি গুঁড়ির সাধারণ মূল্য ৫৫০-৬৫০ টাকা। ক্রেতা যেটি পছন্দ করবেন সেটিকে করাতে প্রসেস করে দেয়া হয়। 

তিনি জানান, গুঁড়ির ওজন ও আকারের ওপর এ দাম নির্ভর করে। বড় আকারের গুঁড়ির দাম ১৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। পেশাদার কসাইরা এগুলো দোকানে ব্যবহার করে থাকেন। 

শহরের দেশলাইপাড়া এলাকার হারুন স মিলের মালিক আসকারী খাঁ জানান, স মিলের বাইরেও শহরের বড় বাজার, মিউনিসিপ্যালিটির বাজারে তিনি তার স’ মিলের গুঁড়ি সরবরাহ করে থাকেন। এবারের ঈদ উপলক্ষে তিনি প্রায় ৫০০টি গুঁড়ি তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় ১৫০টি বিক্রি করেছেন। 

কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার তোহা হোসেন একটি কাঠের গুঁড়ি কিনলেন ভাই ভাই স মিল থেকে। তিনি জানান, এবার গুঁড়ির দাম খুবই বেশি। গত বছর যে গুঁড়ি তিনি ৪৫০ টাকায় কিনেছেন, এবার সেটা ৬৫০ টাকা হয়েছে। তিনি একটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন। তিনি দুটি কাঠের গুঁড়ি কিনেছেন।

ঈদে কোরবানির মাংস প্রক্রিয়াকরণে প্রচুর পরিমাণ অপেশাদার কসাইয়ের আবির্ভাব ঘটে থাকে। তারা কখনো একা, কখনো দলবদ্ধভাবে পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস কেটে থাকেন। এরাও সংগ্রহ করে থাকে কাঠের খাইটে। কুষ্টিয়া শহরের কুমারগাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া প্রতি বছরই দল গঠন করে পশু প্রসেস করে থাকেন। এবার তার দলে ১০ জন রয়েছে। গত ঈদে ছিল ছয়জন। এবার তিনি প্রায় ছয়টি কাঠের গুঁড়ি কিনেছেন।

আরও