টিআইবির নির্বাহী পরিচালক

সরকার, আমলারা সাধারণ মানুষকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করেছে

কর্তৃত্ববাদ বিকাশের মূল কারণ ছিল দুর্নীতি। দুর্নীতি করতে হবে, ক্ষমতার অপব্যবহার করতে হবে এবং সেগুলো করে বিচারহীনতা ভোগ করতে হবে, সেজন্য রাষ্ট্রকাঠামো দখল করতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সাধারণ মানুষ কোনো অবস্থায়ই দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত হতে বাধ্য করেছে সরকার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং আমলাতন্ত্র। কারণ, তাদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে দুর্নীতির আশ্রয় না নিলে মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, বৈষম্যের শিকার হয়। অথচ যারা এগুলো করে, দেশের সম্পদ লুটপাট করে, তাদের কোনো শাস্তি হয় না। একটা সময় আমাদের ধারণ ছিল মানুষ দুর্নীতিবাজদেরকে ঘৃণা করে। এখন তাদেরকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেয়া হয়।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দু’দিনব্যাপী এক নাগরিক সম্মেলনের শেষ দিনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘সুশাসনের জন্য জনসম্পৃক্ত সংস্কার: অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা’ শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের সহায়তায় এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদ বিকাশের মূল কারণ ছিল দুর্নীতি। দুর্নীতি করতে হবে, ক্ষমতার অপব্যবহার করতে হবে এবং সেগুলো করে বিচারহীনতা ভোগ করতে হবে, সেজন্য রাষ্ট্রকাঠামো দখল করতে হবে। দুদকসহ সব প্রতিষ্ঠান দখল করতে হবে। এ জায়গাতে ছিল মূল কর্তৃত্ববাদের বিকাশ।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের ক্ষমতার ভিত্তি নাই। নির্বাচিত সরকার মানে কী, জনগণের ভোটের রায়ে নির্বাচিত সরকার। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রায় কে দিয়েছে? কে বসিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায়? জনগণ। যে ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারকে দেয়া হয়েছে, এটা অভূতপূর্ব। এটা কোনো নির্বাচিত সরকারেরও নেই।’

সম্মেলনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনোনয়ন বাণিজ্য। সংসদে সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে। তবে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ তরুণ ও ৩০ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দিতে হবে-এমন প্রস্তাব দেব আমরা।’

সম্মেলনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী চেতনার পক্ষের শক্তির ভেতরে কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। এভাবে বৈষম্যবিরোধী চেতনার মূল তাৎপর্য তারা ক্ষুণ্ণ করছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমলারা এখন নানা পরিচয়ে মানুষের সামনে হাজির হন, যা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আজকে যে আমলা, কাল সে-ই রাজনীতিবিদ, পরের দিন সে ব্যবসায়ী। উনারা বহুরূপে এখন আমাদের সামনে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে এই তিনটি একই হয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন হলে সাধারণ অজুহাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্তের সংস্কৃতি রোধ করা যায় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দ দেয়া যায়। একটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর এ সরকারকে বসানো হয়েছে। এই সরকার বৈষম্যবিরোধী অবস্থান কেন নেবে না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। আমাদের চাহিদার বৈচিত্র্য থাকবে, এটা স্বীকার করবে না- সেটা তো হতে পারে না।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় দিনের সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ-আবাসিক প্রতিনিধি সোনালি দয়ারত্নে প্রমুখ।

আরও