জাতীয় যুব সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে অংশীদারত্বমূলক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক

উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে অংশীদারত্বমূলক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে বহু ধরনের সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়ন এবং সংস্কার নয়, এর রূপান্তরে একটি অংশীদারত্বমূলক বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা দরকার। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার খুব দ্রুততার সঙ্গে আধুনিক, দক্ষ ও সময়োপযোগী বিশ্বমানের কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তার একটি রূপান্তরমূলক কর্মপরিকল্পনার জন্য দ্রুত কমিটি করবে।’

গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক জাতীয় যুব সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি ও ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশেন (ইএসডিও)।

সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে হলে, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণভাবে বেরোতে হলে শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী দিনের রূপান্তরের অন্যতম চালিকাশক্তি। এ শক্তি শিল্পায়ন, কৃষি ও সেবা খাতের আধুনিকায়ন—সবগুলোর জন্য প্রয়োজন।’

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে অর্থ সংস্থান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘এর উপকার যেন বাংলাশের পিছিয়ে পড়া মানুষ পায়। যারা সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, বিভিন্নভাবে অসুবিধাগ্রস্ত হয়েছেন, তারা যেন রূপান্তরমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগে নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে দাঁড় করাতে পারেন। একই সঙ্গে বস্তিবাসী, দলিত শ্রেণীর পিছিয়ে পড়া মানুষ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসী দুর্গম অঞ্চলের মানুষ যাতে সুযোগ পায় সে বিষয়েও সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ২৫-২৬ বাজেটে অর্থ সংস্থান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে সরকার। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো যেন সেটার সুযোগ পায়।’

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে দেশে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ ছিল। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই ২০২২ সালে সে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে দেশের কারিগরি শিক্ষায় প্রদত্ত সনদ কোনো আন্তর্জাতিক প্রত্যয়নকারী সংস্থার মান পূরণ করে না। তাই অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে পাঠ্যক্রম ও পাঠদান প্রক্রিয়ার সামঞ্জস্য আনতে হবে।’

সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কেমন হবে, তা নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের কেমন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, তার ওপর। সেজন্য বাজার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে অভিবাসন ব্যয় বাড়ছে। তাদের আইনি কাঠামোয় আনতে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যা এখন ভেটিংয়ে আছে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের জন্য ডিসেম্বরে একটি প্লাটফর্ম উদ্বোধন করা হবে। চাকরিদাতাদের চাহিদা ও চাকরিপ্রার্থীদের সব তথ্য সেখানে উন্মুক্ত থাকবে।’

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইউসেপ বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন চৌধুরী, সিপিডির যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রকিব উল্লাহ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ওমেন এন্ট্রাপ্রেনার্সের সভাপতি রুবিনা হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবরার হোসেন, বিকাশ লিমিটেডের সহসভাপতি নোভেরা আয়েশা জামান, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক শহীদ-উজ-জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মার্গা পিটার্স প্রমুখ।

আরও