জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পণ্যের গুণগত মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অধীনে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। ‘১০ জেলায় বিএসটিআইয়ের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন’ নামে এক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। তার মধ্যে একটি গোপালগঞ্জের মান কার্যালয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেটি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে শিল্প মন্ত্রণালয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বগুড়া কিংবা নারায়ণগঞ্জে সেটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে।
অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও অন্য নয়টির সঙ্গে গোপালগঞ্জে বিএসটিআইয়ের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। মূলত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতেই তার জেলায় কার্যালয়টি স্থাপনের উদ্যোগ নেন বিএসটিআই ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কয়েকজন কর্মকর্তা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে নেই কোনো মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়।
দেশের ১০ জেলায় বিএসটিআইয়ের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক (পূর্ণকালীন) উত্তম কুমার মিত্র। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গোপালগঞ্জ অর্থনৈতিক জোন না হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে সেটি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বরং বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, সেখানে এটি দরকার।’ আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের প্রকল্পটি এখন ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পর্যায়ে আছে জানিয়ে উত্তম কুমার বলেন, ‘গোপালগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। কার্যালয় স্থাপন প্রকল্প সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে দুই মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। পিসিসি (প্রজেক্ট কেয়ারিং কমিটি) ও পিইসির (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) মিটিংয়ে সচিব, ডিজি ও পরিচালকরা আলোচনা করেছেন। সে অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জের কথা বলা হয়েছে।’
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিএসটিআইকে বিস্তৃত করতে ২০২০-২১ অর্থবছরে নতুন ১০টি কার্যালয় স্থাপনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সংস্থাটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নওগাঁ, পাবনা, দিনাজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী ও পটুয়াখালী সদর উপজেলায় এসব আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পে বলা হয়েছে, প্রতিটি কার্যালয়ের জন্য ৫১ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ এবং ৩০ হাজার ৯২০ দশমিক ৪৭ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। গবেষণার জন্য কেনা হবে আসবাব, অফিস সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। একই সঙ্গে কমিশন ও বীমা খরচও পরিশোধ করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪৩৩ কোটি ১১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ২৪৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ কোটি টাকা। বাকি ১৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ কোটি টাকা দেবে বিএসটিআই। প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
বিগত সরকার একসঙ্গে ১০টি কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিলেও বরাদ্দকৃত বাজেট দেয়া হয়নি পর্যাপ্ত। অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় গুরুত্ব বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে কার্যালয়গুলো স্থাপন করতে চায় শিল্প মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিএসটিআই) সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, ‘অর্থ জোগানের একটি বিষয় আছে এখানে। আলোচনা করে কোনটি আগে হবে আর কোনটি পরে হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে গোপালগঞ্জের কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এখনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এদিকে ভাড়া করা একটি ভবনে চলছে গোপালগঞ্জ বিএসটিআইয়ের অস্থায়ী কার্যালয়। একজন সহকারী পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলে এর কার্যক্রম। কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে এখনো তাদের জানানো হয়নি বলে জানান সহকারী পরিচালক গোবিন্দ কুমার ঘোষ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এখনো আমাদের জানানো হয়নি। এখন ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মোট ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। আমি মাত্র জয়েন করেছি।’
গোপালগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ না হওয়ায় সেখান থেকে বিএসটিআই কার্যালয়টি সরানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক এসএম ফেরদৌস আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘যে অঞ্চলে শিল্প উৎপাদন বেশি এবং শিল্পজাতীয় পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানেই মান কার্যালয় স্থাপন হওয়ার কথা। কিন্তু গোপালগঞ্জে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি। তাই কার্যালয়টি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি।’
ফেরদৌস আলম আরো বলেন, ‘এ মুহূর্তে অর্থনৈতিকভাবে ওই এলাকাটা (গোপালগঞ্জ) আমাদের জন্য অতটা গুরুত্বপূর্ণ না। কারণ সেখানে খুব বেশি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। তার চেয়ে বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে অনেক ক্ষুদ্র ও ভারী শিল্প-কারখানা রয়েছে। এ দুইটা জেলা আমাদের টার্গেটে আছে। গোপালগঞ্জ যেহেতু কম গুরুত্বপূর্ণ, তাই বগুড়া বা নারায়ণগঞ্জে কার্যালয়টি জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।’