ত্রিশালের বানার নদ

শিল্প বর্জ্যের দূষণে ক্ষণে ক্ষণে বদলায় পানির রঙ

নদের পানি রঙ বদলায়। কখনো রক্তের মতো লাল আবার কখনো কালো কুচকুচে। যেন কাদা আর মাটিতে একাকার। এছাড়া কখনো নীল, কখনো খয়েরি, আবার কখনো ধবধবে সাদা।

নদের পানি রঙ বদলায়। কখনো রক্তের মতো লাল আবার কখনো কালো কুচকুচে। যেন কাদা আর মাটিতে একাকার। এছাড়া কখনো নীল, কখনো খয়েরি, আবার কখনো ধবধবে সাদা। একেক সময় একেক রঙ ধারণ করা নদটির নাম বানার। এটি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় অবস্থিত। নদটি গিয়ে মিশেছে উপজেলার আরেক নদী খিরু নদীতে। আর এই খিরু নদী গিয়ে গফরগাঁও উপজেলা হয়ে গাজীপুরে মিশেছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যায়। শুকনো মৌসুমে নদের পানি ব্যবহার করে এলাকাবাসী জমিতে বোরো চাষসহ কৃষিকাজে সেচ দেয়ার পাশাপাশি মাছ শিকার করতেন। এখন নদটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। যেটুকু পানি নিষ্কাশন হয় তা কারখানার বর্জ্যে নানা রঙ ধারণ করে। নদের পানি ব্যবহার করতে না পারায় এলাকাবাসীর ক্ষোভের শেষ নেই। তবে ক্ষোভ প্রকাশের কোনো জায়গাও তারা পান না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় বানার নদের পানি দিয়ে হতো কৃষিকাজ, খাওয়ানো হতো গবাদীপশুকে, চলত গৃহস্থালিকাজ। সেই পানি এখন স্থানীয়দের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক। বিষাক্ত রঙিন পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষক। রোগাক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু-পাখি, হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অন্যান্য জলজ প্রাণী। স্থানীয়রা নদের পানি ব্যবহার করলে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরনের চর্ম রোগে।

ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের আবুল মনসুর আহমদ জানান, নদের তীরেই আমার জন্ম, বড় হওয়া। আমরা এক সময় এখানে গরু-বাছুর গোসল করিয়েছি, নিজেরাও গোসল করেছি। নদের পাশে বোরো ধান চাষসহ রবি শস্য আবাদ করতাম। কিন্তু পানি নষ্ট হওয়ায় এখন কোনো ফসলই হয় না। ধানের বীজতলা করলেও মরে যায়। তিনি বলেন, নদটি দিয়ে একেক সময় একেক রঙের পানি প্রবাহিত হয়। ক্ষণে ক্ষণে পানির রঙ বদলায়। এক সময় যায় টকটকে লাল, এরপর আসে একদম কালো পানি। এছাড়া সাদা, নীল রঙের পানি আসে নদটি দিয়ে।

স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাক জানান, নদের পানি দ্বারা এখন আর কেউ উপকৃত হয় না। নদে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। হাঁস নদীতে নামলে মারা যায়। নদের মাছ মরে ভেসে ওঠে। বর্ষা এলে নদের রূপ ফিরে আসে। গত কয়েক বছর ধরে অবস্থা চললেও দিন দিন এর অবস্থা খারাপ হচ্ছে।

স্থানীয়া জানান, আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের বানার সেতু থেকে কিলোমিটার দূরে চৌহার খাল। কারখানার বর্জ্য দুই দিক থেকে মিশছে খালে। এক দিক থেকে আসছে সাদা পানি অন্য দিক দিয়ে আসছে নীল পানি। যা মিশে গড়িয়ে পড়ছে বানার নদে। এই চৌহার খালের ওপর রয়েছে আকিজ ইকোনমিক জোনের প্রতিষ্ঠান আকিজ সিরামিক কোম্পানির স্থাপনা। তার পশ্চিমে ১০-১৫ একরের বাতাইন্না বিল। বাতাইন্না বিল সরদান বিলের পানি নিষ্কাশন হয় কৃষিজমিঘেঁষা চৌহার খাল দিয়ে। আকিজ সিরামিক তার পূর্ব পাশের আর কে ব্রিকসের ভেতর দিয়ে বড় বড় আরসিসি পাইপলাইনে কারখানাগুলো থেকে তরল বর্জ্য এসে মিশছে খালের পানিতে। গুজিয়াম-আমিরাবাড়ী সড়কের নিচে দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে অবিরাম বের হয় রঙিন পানি, ওঠে ধোঁয়া। বিষাক্ত সেই পানিই খাল দিয়ে চলে যায় বানার নদে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ড্রেসডেন টেক্সটাইলস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি থেকে বর্জ্য আসে সুড়ঙ্গ দিয়ে।

এই কোম্পানির এজিএম নুরে আলম খোকন জানান, কোম্পানিটিতে ইটিপি স্থাপনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে শিগগিরই এটি চালু করা হবে। ইটিপি চালু হলে বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। ফলে পরিবেশ দূষণ হবে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহমদ জানান, বর্জ্য শোধনাগার চালু না থাকায় কারখানাটি বন্ধের নোটিস দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের নিষেধ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং তাদের বড় ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

আরও