মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল

জনবল সংকট ও প্রচারের অভাবে ২০০ শয্যার ৬০-৮০% থাকে ফাঁকা

মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসংলগ্ন লালকুঠি এলাকায় অবস্থিত ২০০ শয্যার মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল।

মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসংলগ্ন লালকুঠি এলাকায় অবস্থিত ২০০ শয্যার মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল। স্বল্প মূল্যে হাসপাতালটিতে দেয়া হয় মানসম্মত সেবা। তবে চিকিৎসক-নার্সসহ যথেষ্ট পরিমাণে জনবল না থাকায় এবং প্রচারের অভাবে ২০০ শয্যার এ হাসপাতালের সব শয্যা এখনো পুরোপুরিভাবে চালু করা যায়নি। এতে এখানকার ৬০-৮০ শতাংশ শয্যাই থাকে ফাঁকা। জনবল ঘাটতির কারণে সেবাকাজও বিঘ্নিত হচ্ছে।

রাজধানীর অন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে রোগীর সেবা দিয়ে আসছে। অন্যান্য হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা, সিঁড়ি সব জায়গায় রোগী থাকে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় মিরপুরের এ হাসপাতালে।

গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, ১০ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মানুষজনের তেমন সমাগম নেই। জরুরি বিভাগ একদমই ফাঁকা। বহির্বিভাগে মোটামুটি রোগী রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২৫০। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি আছে ২০ জনের মতো। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ শয্যাই খালি।

হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা জানান, ১২০-১৬০টির মতো শয্যা ও কেবিন নিয়মিত ফাঁকা থাকে। শয্যা সংখ্যা ২০০ থাকলেও জনবলের অভাবে সব শয্যা চালু করা যায়নি। ২০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৪টি, নার্সের পদ ৬৬টি। পাশাপাশি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীসহ মোট ১৬১টি পদ আছে। বর্তমানে চিকিৎসক আছেন ৪৯ জন। তবে তাদের মধ্যে অনেকে সংযুক্তিতে রয়েছেন। নার্স আছেন ৩৬ জনের মতো।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঈদের কারণে রোগীর চাপ কম। অন্যান্য দিন বহির্বিভাগে ৩৫০ জনের মতো রোগী দেখা হয়। শয্যাও পরিপূর্ণ থাকে।

তবে আগের তুলনায় হাসপাতালটিতে রোগীর সমাগম কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার বাইরের অন্যান্য জেলা থেকেও চিকিৎসা নিতে এখানে আসছে। হাসপাতালটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১০ মাস বয়সি ওয়াসিম। শিশুটির মা রুনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি পঞ্চগড় থেকে এসছেন ছেলের চিকিৎসা করাতে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে এখানে নয়দিন ধরে ভর্তি রয়েছে। তার ডায়রিয়া হলে সেখানকার স্থানীয় একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এ হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. রেহানা আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা প্রচারণা বাড়াতেও বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা রাখি, কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করলে রোগীর পরিমাণ আরো বাড়বে।’

রাজধানীর মধ্যে মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে মিরপুরের লালকুঠি এলাকার এই মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল একটি। এখানে বিশেষভাবে মা ও শিশুকে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা প্রসব কার্যক্রম চালু আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি দেশের প্রথম ডিজিটাল হাসপাতাল। পুরো হাসপাতালটি অটোমেশন করা আছে। ১০ টাকা দিয়ে প্রথমবার টিকিট দেয়ার পর একটি কার্ড দেয়া হয়। প্রত্যেকের চিপসংবলিত আলাদা কার্ড ও নম্বর অনুযায়ী সব তথ্য জমা থাকে মূল সার্ভারে। এরপর প্রেসক্রিপশন, পরীক্ষা, বিনামূল্যের ওষুধ সবই পাওয়া যায় ডিজিটাল প্রক্রিয়ায়। জনবল পেলে সম্পূর্ণ হাসপাতালটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মডেল হতে পারে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ তলা ভবনের বেজমেন্ট কার পার্কিং, ফায়ার পাম্প ঘর, লাশ ঘর। প্রথম তলায় কার পার্কিং, ওয়াশিং প্লান্ট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন কক্ষ, জেনারেটর কক্ষ, বিদ্যুতের সাবস্টেশন ও অ্যাম্বুলেন্স কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় তথ্য কেন্দ্র, প্রজনন স্বাস্থ্য বিভাগ, জরুরি বিভাগ, টিকেট কাউন্টার, পুষ্টি শিক্ষা কর্নার, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কর্নার ও অপারেশন থিয়েটার। তৃতীয় তলায় প্রসূতি ও গাইনি বহির্বিভাগ, শিশু বহির্বিভাগ, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, রক্ত সঞ্চালন বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার (সেপটিক), অপারেশন থিয়েটার (টিউবেকটমি, এনএসভি)। চতুর্থ তলায় অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স (মেইন), ডেলিভারি কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, আল্ট্রাসনোগ্রাম কক্ষ, কনসালট্যান্ট রুম, প্রসব-পরবর্তী সেবা কক্ষ ও বন্ধ্যাত্ব বিভাগ।

হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. ইকবাল কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটিতে ভর্তুকি কম আসে। অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকেও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। যার কারণে অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে পারছি না। আমাদের কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই। তবে আমরা যে বিষয়টি মাথায় রাখি তা হলো চিকিৎসার মান ও হাসপাতালটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। স্বল্প টাকায় আমরা এ হাসপাতালে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।’

২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর মিরপুরের লালকুঠিতে অবস্থিত মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে (এমসিএইচটিআই) এ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে এ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা, শিশুসেবা ও বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা দেয়া হয়।

আরও