রংপুরে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের সেবা করতে

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের সেবা করতে।’ রংপুরের পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, এ নৌকা আমাদের

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের সেবা করতে।’ রংপুরের পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, এ নৌকা আমাদের একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ দেবে।’ 

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রংপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। কি বাহে একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না।’

জাতীয় সংসদের স্পিকার ও পীরগঞ্জ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের দিয়ে গেলাম। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে ভোট দেয়া, জয়কে ভোট দেয়া। সে জয়ের বোন, পুতুলের বোন।’ 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবার ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে চিৎকার করে দুই হাত তুলে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, নৌকা জিতলে তিনি আবারো রংপুরে যাবেন, জনসভা করবেন এবং বাকি উন্নয়নকাজও সম্পন্ন হবে।

২০ ডিসেম্বর সিলেটে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশের মতোই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেবে বলে যে কথা দিয়েছিল, সে কথা রেখেছে, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণের সেবা করতে। জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা এসেছিল লুটপাট করতে। লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এগুলো ছিল তাদের কাজ। তারা জনমানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। নিজেদের আখের গুছিয়েছে। আর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু মানুষকে সম্পদশালী করেছে। অন্যদিকে আমার মজুর, কৃষক, শ্রমিক, সবাই মানবতার জীবন যাপন করেছেন। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষা সবদিক থেকে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বেশি মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল এ রংপুর। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোনোদিন এখানে আর মঙ্গা হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি এবং বাংলাদেশে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এ স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যেসব দল উঠে এসেছে তারা মানুষের শান্তি দেখতে পারে না। আপনাদের মনে আছে, অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রংপুরও বাদ যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কয়েক দিন আগে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলে দিয়েছে ওই বিএনপি-জামায়াত চক্রের সন্ত্রাসীরা। কারণ রেলের বগি পড়ে যাবে, মানুষ মারা যাবে। মানুষ মারার ফাঁদ তারা তৈরি করেছে। এর থেকে ঘৃণার আর কী বা থাকতে পারে? এ অগ্নিসন্ত্রাসেই নাকি তাদের আনন্দ, এটাই নাকি তাদের আন্দোলন।’

অগ্নিসন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে ছাত্ররা আছে, তরুণ সমাজ আছে, প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। ওই অগ্নিসন্ত্রাস যারা করতে আসবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে। উপযুক্ত শাস্তির জন্য তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে আমরা খেলতে দেব না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি, দিন-রাত পরিশ্রম করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আর তারা আসে ধ্বংস করার জন্য। কাজেই এদের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে, সজাগ হতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির কাছে রেললাইন থাকলে পাহারা দিতে হবে। জনগণকেই এটা প্রতিরোধ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০১৩ সালে জনগণ এটা প্রতিরোধ করেছিল এবং ২০১৪ সালে জনগণ এগুলো প্রতিরোধ করে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আমরা সরকারে এসেছিলাম। কাজেই সবাইকে এক হয়ে এ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার স্মার্ট হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট হবে, কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, আগামীতে এটা কার্যকর করে আমরা আরো এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, একটি মানুষও বিনাচিকিৎসায় থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষের যেসব মৌলিক অধিকার রয়েছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা, তার ব্যবস্থা আমরা করব। এটা আমরা করেও দিচ্ছি এবং এটা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আর এটা অব্যাহত থাকতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দরকার।’

পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেয়ার আগে শেখ হাসিনা তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরো দুটি জনসভায় বক্তব্য দেন। 

জনসভায় পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন রাজার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বক্তব্য দেন। 

প্রধানমন্ত্রী তার দিনব্যাপী রংপুর সফরে পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরের বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং সড়কপথে তারাগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

আরও