বিএসইসির তদন্ত কমিটি কি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম তদন্ত করতে পারবে?

দেশের পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারসাজির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গত রোববার পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যেসব বিষয় নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে বিএসইসির কর্মকর্তাদেরও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটিও বলছে, নিজেদের ঘর থেকেই তারা শুদ্ধি অভিযান শুরু

দেশের পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারসাজির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গত রোববার পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যেসব বিষয় নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে বিএসইসির কর্মকর্তাদেরও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটিও বলছে, নিজেদের ঘর থেকেই তারা শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে চায়। এ অবস্থায় নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিজেরাই তদন্ত করার বিষয়টি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটির সদস্য করায়ও তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে গত রোববার সংস্থাটির ৯১৮তম জরুরি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। পাঁচ সদস্যের এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও কনসালট্যান্ট এবং ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ। বাকি চার সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. জিশান হায়দার ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এ কমিটিকে প্রথম ধাপে ১২টি বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

অতীতে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছিল। তবে প্রথমবারের মতো বিএসইসি নিজেই অতীতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেগুলো অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসির কর্মকর্তাদেরই জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য এসব ইস্যু অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বাজারসংশ্লিষ্টদের। এ অবস্থায় বিএসইসির কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে অতীতের মতো অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে সেটি আরো বেশি কার্যকর ও যৌক্তিক হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বিএসইসির পক্ষ থেকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর সেকশন ২১ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩-এর ধারা ১৭ক-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ দুই ধারা অনুসারে সাধারণত তালিকাভুক্ত কোম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তদন্ত করা হয়। আলোচ্য দুই ধারায় বিএসইসির নিজেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতার বিষয়টি সরাসরি বলা নেই। যদিও বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব বিষয় নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে সংস্থাটির নিজেদের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কমিশনের সার্ভিস রুলস অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে এ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হলেও বিএসইসির নিজেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে বিএসইসির অংশগ্রহণ যত কম রাখা যায় তত ভালো। কমিটির তদন্তে যেসব উঠে আসবে সেগুলোর বিষয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

পুঁজিবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য ইয়াওয়ার সাঈদ দুজনই দুটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে ড. জিয়া উদ্দিন এখনো ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠান ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট আরো পাঁচ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে সঙ্গে নিয়ে আরেক সম্পদ ব্যবস্থাপক এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ পরিচালিত দুই ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তাদের এ উদ্যোগের ফলে দুই ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে এলআর গ্লোবালকে অপসারণের আদেশও দিয়েছিল বিএসইসি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতেও গড়িয়েছিল। অন্যদিকে বিএসইসির পক্ষ থেকে যেসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার মধ্যে কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডের অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়টি রয়েছে। এর সঙ্গে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। 

তদন্ত কমিটির সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির দায়িত্ব নেয়ার আগে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

অন্যদিকে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ইয়াওয়ার সাঈদ গত ২৯ আগস্ট এইমস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে তার ব্যবস্থাপনাধীন রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইশতিসনার ইউনিটে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। তাছাড়া গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু ফান্ড থেকে ফরচুন সুজের শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে ক্রয়মূল্যের তুলনায় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের মূল্য ৬১৩ শতাংশ ও ১ হাজার ৪৬৩ শতাংশ বেড়েছে। ফান্ডটির ৩০ জুন ২০২১ ও ৩০ জুন ২০২২ সময়ের পোর্টফোলিও প্রতিবেদনে এ তথ্য দেখা গেছে। বেক্সিমকোর সুকুক ও ফরচুন সুজের বিষয়টি বিএসইসির তদন্ত কমিটির তদন্তের আওতায় রয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে অতীতে এ দুটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিষয়টি বর্তমানে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে ইয়াওয়ার সাঈদের ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। 

এ বিষয়ে ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, ‘যে কাজের জন্য আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে সেটি আমি সততার সঙ্গে করছি কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এ পুঁজিবাজারে অনেক পীর-দরবেশ বছরের পর বছর ছিল। পীর-দরবেশরা না থাকলেও বর্তমানে তাদের মুরিদরা রয়েছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে একটি কমিটি থাকে। তারাই সিদ্ধান্ত নেয় কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হবে। আমার মতো বয়সের কেউ এটা কেন ওটা কেন সেটা বলে না। সুকুকে আমি বিনিয়োগ করে ধরা খেয়েছি। আমার রাগ তো সবচেয়ে বেশি হবে যে ওই ব্যাটাকে ধরা উচিত যে আমাকেও ধরা খাওয়াইছে।’ 

তাহলে তো সেই রাগের কারণে তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত হতে পারে–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেজন্যই এ তদন্ত কমিটিতে বিভিন্ন লোক রয়েছে। আমি বললেই তো হবে না। এখানে প্রশাসনের লোক আছে, ব্যারিস্টার আছে। আমরা ভুল করলে সেটি ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু আমাদের কাজ করতে দিন।’

বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কমিটির সদস্য করার কারণে অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। ফলে নির্মোহভাবে তদন্ত ও অনুসন্ধান করা হচ্ছে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সদস্য করা হলে সেটি স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে। এছাড়া কমিটিতে পেশাদার নিরীক্ষক এবং কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে বিতর্ক তৈরি হলে সেটি মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে এটি আই ওয়াশ কিনা। আমি মনে করি গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন পেশাদার ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া উচিত।’

বিএসইসির গঠন করা অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটিকে প্রথম ধাপে মোট ১২ বিষয় তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইশতিসনা ইস্যুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান ও তদন্ত করা। আইএফআইসি গ্যারান্টেড শেরপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান ও তদন্ত। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন বা মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ বা শেয়ার অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান ও তদন্ত। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের আইপিও অনুমোদন ও ইস্যুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় অনুসন্ধান ও তদন্ত।

আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজসংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, ব্লক মার্কেটে শেয়ার অধিগ্রহণসংক্রান্ত কারসাজি ও ওটিসি থেকে এসএমই প্লাটফর্মে কোম্পানিটিকে স্থানান্তরের জন্য বিএসইসির আরোপিত শর্ত পরিপালনের হালনাগাদ তথ্যসহ যাবতীয় বিষয়েও অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে কমিটি। সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডসংক্রান্ত পুঁজিবাজারে যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি এবং ২০২০ সালে কোম্পানিটিকে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান বোর্ডে পুনরায় তালিকাভুক্তসংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা হবে।

ফরচুন সুজ লিমিটেডসংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণসংক্রান্ত অনিয়ম ও কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা হবে। রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট ও পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করে বিক্রয় বেশি দেখানো এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান ও তদন্ত করা। একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডসংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণসংক্রান্ত অনিয়ম এবং আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা থেকে ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ঋণ পরিশোধে অনিয়মের বিষয়টিও অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে এ কমিটি।

কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডসংক্রান্ত (আগে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড) পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত। কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত। এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার অধিগ্রহণ বা হস্তান্তর, মূল্যসংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ, সেকেন্ডারি মার্কেটে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে কমিটি।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ও স্বার্থগত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘তদন্তের ক্ষেত্রে যখন এ ধরনের কোনো ইস্যু আসবে যেটার সঙ্গে কমিটির সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও ওনাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল সেক্ষেত্রে তিনি নিজেকে সেই ইস্যুর তদন্ত কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেবেন। বিশ্বজুড়েই এটি বহুল চর্চিত বিষয়। কমিটির কার্যক্রমের মাধ্যমেই আপনারা দেখতে পাবেন যে বিষয়টি সঠিকভাবে এগোচ্ছে কিনা। আমরা যে কাজের মিশন নিয়ে এখানে এসেছি সেটি যদি করতে না পারি তাহলে আমরা এখানে থাকব না, এটি আমাদের পরিষ্কার কথা।’

আরও