ময়মনসিংহ মেডিকেলে ৯ বছর ধরে বন্ধ রেডিওথেরাপি

চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ক্যান্সার আক্রান্তদের

বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলার একটিতেও নেই ক্যান্সার হাসপাতাল বা ইউনিট।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলার একটিতেও নেই ক্যান্সার হাসপাতাল বা ইউনিট। আক্রান্তদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চালু করা হয় কোবাল্ট সিক্সটি রেডিওথেরাপি মেশিন। সেটিও নয় বছর ধরে বিকল। হাসপাতালটিতে ক্যান্সারের অন্যান্য চিকিৎসা মিললেও রেডিওথেরাপি নিতে পারছে না আক্রান্তরা। উন্নত চিকিৎসা নিতে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ঢাকায়।  এতে আগের তুলনায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। অনেকের পক্ষে ঢাকায় গিয়েও রেডিওথেরাপি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আক্রান্ত রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত রেডিওথেরাপি মেশিনটি সচল ছিল। বিকল হওয়ার পর মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিকল রেডিওথেরাপি মেশিন মেরামতের জন্য চিঠি পাঠানো হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

মমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে টুজি রেডিওথেরাপির খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। সেটি বেসরকারিভাবে করলে খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। আর থ্রিজি রেডিওথেরাপিতে সরকারিভাবে খরচ ৫৫-৬০ হাজার টাকা এবং বেসরকারিভাবে করলে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা।

মমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম পাঠান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম অনুষজ্ঞ রেডিওথেরাপি। এর মাধ্যমে রোগীদের যন্ত্রণা উপশম করা হয়। সার্জারি, কেমোথেরাপিসহ অন্য সব চিকিৎসা চললেও রেডিওথেরাপির জন্য রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। অনেক সময় খরচের কথা চিন্তা করে গরিব রোগীরা ঢাকায় যায় না। হাসপাতালে রেডিওথেরাপি চালু থাকলে ক্যান্সার রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা এখানেই হতো।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মমেক হাসপাতালে ২০২৩ সালে হাজার ২০০ ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০২২ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল দুই হাজারের বেশি। ২০২১ সালে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় হাজার ৯০০ জন। রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, স্তন, জরায়ু পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বৃহত্তর ময়মনসিংহে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র নয় শয্যার একটি ডে কেয়ার সেন্টার। বিশেষায়িত কোনো ইউনিট না থাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ওয়ার্ডে ক্যান্সার রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় হাসপাতালটিতে।

ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুরের বাসিন্দা মাহমুদুল করিম সেলিম জানান, তার স্ত্রী শামীমা আক্তারের ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর ময়মনসিংহে চিকিৎসা করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিতে হয়েছে। ময়মনসিংহে এই চিকিৎসা থাকলে তার খরচ অনেক কম হতো। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না থাকায় ময়মনসিংহের চিকিৎসক রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

মমেক হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেসরকারিভাবে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুল। মমেক হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটি ডে কেয়ার আছে। এখন সেখানে শুধু রক্ত দেয়া হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত কোনো রোগীর চিকিৎসা পুরোপুরি হয় না। এজন্য ময়মনসিংহে বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল প্রয়োজন।

আরও