ঈদের আগের রাত। পল্লবীর আরিফাবাদ আবাসিক এলাকায় চলছে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের মোটরসাইকেল মহড়া। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এসব মোটরসাইকেলে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে আফ্রিকার গভীর জঙ্গলে হিংস্র প্রাণী তাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন। এ শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়ে তিন বছরের ছোট্ট শিশু নিবিড়। শিশুটি জন্মের পর থেকেই দুর্বল হৃৎপিণ্ডজনিত রোগ ডিকম্পেনসেটিও কর্ডিসে (ডিসি) ভুগছে। পরে শিশুটির মা জাতীয় জরুরি সেবায় কল করে পুলিশের সহযোগিতায় মোটরসাইকেল মহড়া বন্ধ করতে পারলেও সেই থেকে শিশুটি অসুস্থ।
শুধু নিবিড়ই নয়, ঈদের ছুটিতে ৭ হাজার ৫৫৫টি শিশু সুরক্ষাসংক্রান্ত সহযোগিতার কল পেয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন। এ ধরনের শব্দ দূষণ সব বয়সীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় জরুরি সেবার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশ থেকে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৩টি কল আসে। এর মধ্যে শিশুদের জন্য কল আসে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৫৫৫টি।
বাংলাদেশ শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। এ বিধির আওতায় স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ মিটারের ভেতর কোনো ধরনের হর্ন বাজানো যাবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনোভাবেই শব্দদূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। মানবদেহের শ্রবণশব্দ ১৫-২০ কিলোহার্জ। সবার ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের নিচে। এর ওপরে থাকলে শ্রবণক্ষমতা লোপ পেতে পারে। এ মাত্রা ৮০ ডেসিবেলের ওপরে গেলে একজন মানুষ সম্পূর্ণরূপে বধির হতে পারে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিল্প-কারখানার শব্দ অবশ্যই ৭৫ ডেসিবেলের নিচে থাকতে হবে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শব্দ দূষণের মাত্রা ৬০-৮০ ডেসিবেলের মধ্যে। অথচ রাজধানীর অলিগলিতে তীব্র হর্ন লাগাতার বাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলোয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
উচ্চ শব্দ শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যে কেউ বধির হয়ে যেতে পারে। এর ফলে স্ট্রেস-সংক্রান্ত অসুখ ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া, যোগাযোগে সমস্যা, উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শব্দ দূষণে যে কারো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বধিরতাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, শিশুর রাতের ঘুম কমে যায়, অন্যের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা ও শোনার ক্ষমতা কমে যায়, পড়াশোনায় দক্ষতা কমে যায় ইত্যাদি। শব্দ দূষণের মারাত্মক পরিণতি হলো বধির হয়ে যাওয়া।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির মধ্যে জাতীয় জরুরি সেবার মাধ্যমে নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি সেবা সরবরাহ করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত সেগুলো সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে সেবা দেয়া হয়েছে। আর যেগুলো ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যসেবা বা অ্যাম্বুলেন্স-সংক্রান্ত কল, সেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সেবা সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় জরুরি সেবা।’