সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবিত ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের কাছে গতকাল দলটি নিজেদের লিখিত মতামত হস্তান্তর করে।
পরে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টি প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা পুরোপুরি একমত হতে পেরেছি। ২৯টি প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। সব মিলিয়ে ১৪২টিতে পুরোপুরি ও আংশিক একমত হয়েছি এবং ২২টি প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে একমত হওয়ার পরও মন্তব্য করেছি। যে ২২টিতে একমত হইনি তাতেও মন্তব্য করেছি।’
সংবিধানসংশ্লিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাব রেখেছে এনসিপি। এ বিষয়ে দলটি থেকে বলা হয়েছে, যেসব সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে।
দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে এনসিপি। তবে তারা বলছে, নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ভোটারদের জানার অধিকার আছে কারা উচ্চকক্ষে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ বাধ্যতামূলক না করার প্রস্তাব রেখে এনসিপি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন; তবে তা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়।
এছাড়া এনসিপি মনে করে, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়া উচিত। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি আর প্রয়োজন হবে না। সংবিধানে প্রস্তাবিত সাংবিধানিক কাউন্সিল ভবিষ্যতে এ দায়িত্ব নিতে পারে।
কমিশনের কাছে তিনটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি ১৬৬টি সুপারিশের সবই জুলাই চার্টারে থাকবে না। আমরা এক ধরনের উদ্বেগ জানিয়েছি; পাঁচটি কমিশন আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছে। সেখান থেকে কনসাইজ করে ১৬৬টি স্প্রেডশিটে এসেছে। সেখান থেকে আরো কনসাইজ করে জুলাই চার্টারে আসবে।’
তুষার বলেন, ‘যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো কেন বাদ দেয়া হচ্ছে, কারণ ঐকমত্য হচ্ছে না। এসব যে জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না তা নিয়ে কমিশন কী ভাবছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে, ১১টি সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। এসব কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হলো তাও আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল কমিশনের কাছে।’
তিনি জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে না পাঠানোর কারণও জানতে চেয়েছে এনসিপি।
মতামত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন, জাবেদ রাশিম, আরমান হোসাইন ও সালেউদ্দিন সিফাত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কারের জন্য গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।