কয়লা আমদানি ছাড়া কার্যত বন্ধ থাকে ময়মনসিংহের দুই বন্দর

বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান ত্রিদেশীয় আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ও আমদানি-রফতানি সুবিধার জন্য ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নির্মাণ করা হয় গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।

বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান ত্রিদেশীয় আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ও আমদানি-রফতানি সুবিধার জন্য ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নির্মাণ করা হয় গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পণ্য রফতানি তো দূরের কথা, একমাত্র কয়লা আমদানি ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানি বা রফতানি হচ্ছে না বন্দর দুটি দিয়ে। তাও আবার বছরে ছয় মাস, বাকি ছয় মাস বন্দর দুটি বন্ধই থাকছে। কয়লা আমদানি ছাড়া কার্যত সারা বছরই বন্ধ থাকে বন্দর দুটি।

যদিও পাথরসহ তাজা ফলমূল, গাছপালা, বীজ, গম, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, ডাব, হলুদ, কাজুবাদাম, তেঁতুল, তিল, সরিষা, ভুসি, চালের গুঁড়া, গবাদিপশু ও মাছের পোনা আমদানির অনুমোদন রয়েছে এ বন্দর দুটি দিয়ে। রফতানির অনুমোদন রয়েছে সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য ও শিশুখাদ্য।

গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত শুধু কয়লা আমদানি হয়েছে। অন্য কোনো পণ্য আমদানি-রফতানি হয়নি। বছরের বাকি ছয় মাস এখানে কোনো কাজ থাকে না। এ সময় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েন। কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বন্দরে কোয়ারেন্টিন অফিস প্রয়োজন হয়। কোয়ারেন্টিন অফিস আমাদের বন্দরে নেই। ভারতীয় অংশেও কোয়ারেন্টিন অফিস নেই। যে কারণে কৃষিপণ্য আমদানি-রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে বন্দর দিয়ে যাতে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি করা যায়, সেজন্য আলোচনা চলছে।’

ভুটানসহ ভারতের সেভেন সিস্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। লক্ষ্য ছিল ভুটান-ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়লা, পাথর, মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁশ, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি কিন্তু বন্দর দুটির কার্যক্রম শুধু কয়লা আমদানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

২০১৪-২২ সাল পর্যন্ত কয়লা ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কারণ একটি মামলার জন্য কয়লা আমদানি বন্ধ ছিল। তবে আদালত নির্দেশনা দেয়ার কিছুদিন পর কয়লা এসেছে। আবার কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবেই কেটেছে আট বছর। ২০২৩ সালে আবার কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে।

গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন ৬৯ হাজার ৬৮৮ টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৪ হাজার ১৫২, ফেব্রুয়ারিতে ১২ হাজার ৭৫৩, মার্চে ১৪৫, এপ্রিলে ১১ হাজার ৬২১, মে মাসে ১৫ হাজার ২৩৪ এবং জুনে ১৭ হাজার ৭৮৩ টন কয়লা আমদানি হয়েছে।

গোবরাকুড়া বন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের মহাসচিব অশোক সরকার অপু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের অন্য পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্য দিয়ে পণ্য আমদানি করতে হয়। এলাকাটা জঙ্গলের মতো হওয়ায় আমদানি করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। যে কারণে শুধু কয়লা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি। তবে ফলমূল, মসলা জাতীয় কিছু পণ্য আমদানির চেষ্টা চলছে।’

১৯৭৯ সালে কড়ইতলী ও ১৯৯৭ সালে গোবড়াকুড়া শুল্ক স্টেশনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হয়। কড়ইতলী ব্যবসায়ীদর নিয়ে কড়ইতলী কোল অ্যান্ড কোক ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়শন ও গোবড়াকুড়া আমদানি-রফতনিকারক গ্রুপ নামে দুটি সংগঠন রয়েছে। এ দুটি সংগঠন কড়ইতলী ও গোবড়াকুড়া স্থলবন্দর নিয়ন্ত্রণ করে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। এরপর প্রায় ছয় বছর পার হলেও বন্দর দুটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠেনি। পরে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ১৪ একর জমির ওপর স্থলবন্দর দুটির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। চলতি বছরের ১১ মার্চ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় নির্মিত পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা সদর থেকে এ দুটি বন্দরের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার।

আরও