কয়েক বছর ধরেই দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশ মন্থর। গত ছয় মাসে তা আরো মন্থর হয়ে এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) দেশের বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর আগে গত অর্থবছরের একই সময়ে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল প্রায় ১৬ লাখ ৪১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে ঋণের এ স্থিতি বেড়ে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সে হিসাবে পাঁচ মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ স্থিতি বেড়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। আর ঋণ প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১ দশমিক ৪১ শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ এর আগে এতটা মন্থর হয়ে আসতে দেখা যায়নি। নভেম্বরের পরও এ চিত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং এখন ঋণের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে এরও বড় অংশ এসেছে অনাদায়ী সুদ ও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে।
শুধু পাঁচ মাসের হিসাবে নয়, বরং নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরের পরিসংখ্যানেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে আসার চিত্র দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হলেও ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছিল ৬ শতাংশের বেশি। আর ২০২৩ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হলো বেসরকারি খাত। শিল্পের উৎপাদন, বিপণন কিংবা সেবা খাতের সিংহভাগই বেসরকারি খাতনির্ভর। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে খাতটিকে ঋণবঞ্চিত করা হচ্ছে। যদিও মূল্যস্ফীতি না কমে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এখন আরো বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যবসায়ীরা আরো নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ নয়, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছি, তারা বিদ্যমান ব্যবসা কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সে চেষ্টা করছি। ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন কোনো প্রকল্প নেয়ার কথা কেউ ভাবছে বলে আমরা জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে সরকার কারো সঙ্গে আলোচনায়ও বসছে না।’
আজম জে চৌধুরী দীর্ঘদিন বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখনো তিনি ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এখন অনেকটাই দুর্লভ বিষয়। আর এত উচ্চ সুদ আর ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে নতুন ব্যবসা করাও অনেক কঠিন। সরকার কারো সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের ওপর চাপ আরো বেড়েছে। এভাবে চলতে পারে না।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাড়ানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার (রেপো রেট)। এর পর থেকে ক্রমাগতভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। নীতি সুদহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন মুদ্রানীতিতেও সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আভাস দেয়া হয়েছে।
নগদ টাকার (তারল্য) সংকট ও নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাবে ২০২৩ সালের জুন থেকেই ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে ঠেকেছে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির কোনো সুফল জনগণ পায়নি। বরং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি যখন সর্বনিম্ন, তখন মূল্যস্ফীতির হার আরো লাগামহীন হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। জুলাইয়ে এ হার বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকে। আগস্টেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এরপর সেপ্টেম্বরে তা ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দেখানো হলেও অক্টোবরে বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে উঠে যায়। আর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৮ ও ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কাজেই আসেনি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি এতটা কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির কার্যকর প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যাচ্ছে না। ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সরাসরি প্রভাবে ব্যবসায়িক খরচ বাড়ছে। এক্ষেত্রে এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চ সুদহার ব্যবসার নগদ প্রবাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সুদহার আরো বাড়লে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বাড়াবে, যা ব্যবসা পরিচালনা আরো কঠিন করে তুলবে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এ নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সুদহার ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর ফলে ঋণগ্রহণের প্রবণতা কমে যাচ্ছে। এটি বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা যদি উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে খেলাপি ঋণ আরো বাড়বে। পাশাপাশি নতুন প্রকল্প বা ব্যবসা সম্প্রসারণের পথও সংকুচিত হয়ে আসবে। এতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি আরো শ্লথ হবে, যা কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
মূল্যস্ফীতি না কমলেও সুদহার বৃদ্ধির সুফল বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে ব্যাংকগুলো। উচ্চ সুদের সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড ক্রয় ও ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে বেশি সুদ আদায় করে ২০২৪ সালে ব্যাংকগুলো রেকর্ড পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করেছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতদিন দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস ছিল বেসরকারি খাত। শিল্প ও সেবা খাতে ঋণ দিয়ে প্রাপ্ত সুদ ও কমিশন থেকে মুনাফা করত ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ মুহূর্তে ব্যাংকের আয় ও মুনাফার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সরকারি কোষাগার। ব্যক্তি খাতকে ঋণ না দিয়ে ব্যাংকগুলো এখন সরকারকেই বেশি ঋণ দিচ্ছে। সরকারকে দেয়া ঋণে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফাও ফুলেফেঁপে উঠেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার। ঘোষিত এ বাজেট পাসের মাত্র এক মাস পাঁচদিনের মাথায় ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হয়। অবাস্তবায়নযোগ্য এ বাজেটই এখনো টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঘোষিত এ বাজেট বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ ব্যাংক খাত থেকে নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। যদিও সরকারকে এ পরিমাণ ঋণ দেয়ার সক্ষমতা দেশের ব্যাংক খাতের রয়েছে কিনা, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দেশের ব্যাংক খাতে তিন বছর ধরেই তারল্য সংকট চলছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে এসে এ সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠে।
ঋণের অভাব ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যাংক দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ঋণ বিতরণই বন্ধ করে দিয়েছে। ভালো ব্যাংকগুলোর কাছে ঋণ দেয়ার মতো অর্থ থাকলেও সেটির সুদহার অনেক বেশি। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী আগের ঋণই পরিশোধ করতে পারছেন না। পণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যে মানুষ ঠিকমতো ব্যবসাও করতে পারছে না। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী ব্যবসা খুবই জটিলতার মধ্যে আছে। সুদহার না কমালে আমাদের হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে বন্ধই করে দিতে হবে। অনেকের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উৎপাদন খাতের দুর্দশা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সুদহার বাড়িয়ে সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে পারবে বলে মনে হয় না।’
তারল্য সংকটের প্রভাবে তিন বছর ধরে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গত ডিসেম্বরে এ বিলের সুদহার ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। সে হিসাবে সবচেয়ে কম মেয়াদি এ বিলের সুদহার বেড়েছে ৩৯৬ শতাংশ। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ২৭২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছয় মাস মেয়াদি বিলের সুদহার ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। এক বছর বা ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার বেড়েছে ২৪৯ শতাংশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ মেয়াদের এ বিলের সুদহার ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ থাকলেও তা এখন ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ট্রেজারি বিলের মতোই সুদহার চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে ট্রেজারি বন্ডের। ডিসেম্বরে দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর তিন বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। আরো বেশি মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছুঁয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। যদিও তিন বছর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ মেয়াদি (২০ বছর) বন্ডের সুদহারও ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল।
বিল-বন্ডে সুদহারের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাংকগুলোকে বেসরকারি খাতবিমুখ করে তুলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী। বর্তমানে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত এ অর্থনীতিবিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যেসব কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলোকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না। স্বাভাবিক অর্থনীতির কোনো বৈশিষ্ট্যই এখানে উপস্থিত নেই। যেসব খাত থেকে ব্যাংকের মুনাফা আসার কথা, সেখান থেকে আসছে না। বেসরকারি খাতের তুলনায় এখন সরকারকে ঋণ দেয়াই বেশি লাভজনক। সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে, আর সে সুদের জোগান দেয়ার জন্য নানামুখী কর আরোপ করছে। এগুলো করতে গিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর মতো প্রধান লক্ষ্য থেকেও বিচ্যুত হয়ে পড়েছে সরকার। বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণ সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত।’
যদিও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলছেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে কোনো ব্যবসায়ীই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। সবাই নিজেদের বিদ্যমান ব্যবসা সামলে রাখায় বেশি মনোযোগী হন। এ কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি এতটা কমে গেছে। তারল্য সংকট থাকলেও ব্যাংকগুলো এখনো ভালো প্রকল্প পেলে ঋণ দিচ্ছে।’