চাঁদপুরে তীব্র হচ্ছে পদ্মা মেঘনার ভাঙন

চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে পানি বাড়ায় তীরবর্তী এলাকাগুলোয় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের ভাঙনে সদর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ফসলি জমি ও বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে।

চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে পানি বাড়ায় তীরবর্তী এলাকাগুলোয় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের ভাঙনে সদর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ফসলি জমি ও বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। একই অবস্থা মেঘনার তীরবর্তী হাইমচর উপজেলার জালিয়ারচরে। সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদীতীরের বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই বর্ষার সময় ভাঙন দেখা দেয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে এখন নিঃস্ব। নদীতে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে বিভিন্ন সময় তারা আন্দোলনও করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। তার পরও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। নদীর স্রোত ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে ভাঙন বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজরাজেশ্বর ও জালিয়ারচর ইউনিয়ন নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের কিছু এলাকা এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে একটি সাইক্লোন শেল্টার, কয়েকটি কবরস্থান, মসজিদ, ঈদগাহ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর দিক, মালকান্দি, চোকদারকান্দি ও ঢালীকান্দি গ্রামের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি। এসব গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভাঙনের শিকার নূরনবী বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমরা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়লে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। নদীতে পানি বাড়লে ভাঙনও বেড়ে যায়। এর স্থায়ী সমাধান দরকার।’

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোস্তফা জানান, আগেও নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। এখন আবারো ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন ক্রমে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী ব্যাপারী  বলেন, ‘উজান থেকে প্রবল বেগে পানি চাঁদপুর হয়ে নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। এজন্য রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চর এলাকায় মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে তীব্র ঢেউ এবং ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হয়। পদ্মায় পানি বাড়ায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর দিক, মালকান্দি, চোকদারকান্দি, ঢালীকান্দিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

অন্যদিকে হাইমচর উপজেলার জালিয়ারচরে মেঘনা নদীতীরেও দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। উপজেলার বাংলাবাজার থেকে শহর আলী মোড় পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। তবে চরভৈরবী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাটাখালির হাওলাদার বাড়ি থেকে মানিক সর্দারের ঘাট পর্যন্ত ৭০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ হয়নি বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু ইউসুফ ব্যাপারী বলেন, ‘হাইমচর উপজেলা মধ্যে জালিয়ারচরের মানুষ বেশি অবহেলিত। হাইমচরজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলেও আমাদের এখানে কোনো বাঁধ নেই। এ কারণে প্রতিনিয়ত মেঘনার ভাঙনের শিকার হতে হয়। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমাদের ঘরবাড়ি।’

এ বিষয়ে হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা কাছ থেকে দেখেছি। বাঁধটি নির্মাণ হলে মানুষ নিজ ভূমিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করব।’

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

আরও