কালো আখ চাষে লাভ দেখছেন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলার কৃষক

ফিলিপাইনে উৎপত্তি কালো আখ চাষ করে লাভ দেখছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার কৃষক।

ফিলিপাইনে উৎপত্তি কালো আখ চাষ করে লাভ দেখছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার কৃষক। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এ আখের চাষ। একই সঙ্গে প্রতি বছরই আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত দশক ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেক চাষী আখ চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। এর মধ্যে চিনিকলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশীয় প্রচলিত প্রায় জাতের আখ চাষই কমে গেছে।

কালো আখ চাষ করছেন—এমন কৃষক বলেছেন, কালো আখের কাণ্ডগুলো নরম, বেশি রসযুক্ত এবং মিষ্টি, যা চিবানো বা রস তৈরি করা সহজ এবং এতে ভালো ফলনও নিশ্চিত হয়। তারা জানান, এই আখ মুখে খেতে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে এ আখের চাষ করছেন। বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই আখ কাটার মৌসুম থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই আখ চাষের প্রচলন ব্যাপকতা না পাওয়ায় তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তৈরি ডাটার ভিত্তিতে এ দপ্তর বলছে, মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে কালো আখ চাষ হচ্ছে। এই জেলার মাটির কাঠামো এই আখ উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি করেছে। এরপর রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। এই জেলায় প্রায় ৩৫-৪০ হেক্টর জমিতে এই আখ চাষ হচ্ছে। তারপর রয়েছে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা। সরকারি ওই দপ্তরের হিসাব মতে, কুষ্টিয়ায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে এই আখ চাষ হয় অন্যদিকে, ঝিনাইদহে ১০ থেকে হেক্টর জমিতে এই আখ চাষ হয়ে থাকে।

মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে এই আখ চাষ করছেন একজন সাংবাদিক। গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের রেজা আন উল বাশার তাপস পেশাগত জীবনে এনটিভির মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি। তিনি দুই বছর আগে তিন বিঘা ফিলিপাইন কালো আখের চাষ শুরু করেন। ফলন ও লাভ তাকে আগ্রহ দেখায়। বড় পরিসরে আখ চাষ করার জন্য নিজে চারা তৈরি করে নয় বিঘা জমিতে এ মৌসুমে আখ করেছেন। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। প্রতিটি চারা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা চারা নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতি পিস পূর্ণ আখ বিক্রি হয়ে থাকে ৫০-৬০ টাকা দরে। মেহেরপুরে আখের চাহিদা মিটিয়ে মাঠ থেকে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাশের জেলার ক্রেতারা।

গাছ লাগানোর পর একটি আখ লম্বায় ১৫-২০ ফুট হয়। আখ ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ, সুতা ও তার দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচা না দিলে ঝড় ও বাতাসে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।

কৃষি অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার উপপরিচালক সূফী মো. রফিকুজ্জামান জানান, ব্যাপকতা না পেলেও এখন অনেক কৃষক আখ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে আখ চাষের জন্য ২ হাজার ৫০০ চারা রোপণ করতে হয়। এখান থেকে প্রায় ৯-১০ হাজার আখ পাওয়া যায়। একটি আখ গাছ থেকে ৯-১১টি আখ পাওয়া যায়। নিয়মিত আখ ক্ষেত পরিচর্যা করতে হয়। রোগবালাই তুলনামূলক কম। আখ রোপণের জন্য ৭ থেকে ১০ মাস পর বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের দিননাথপুর গ্রামের কৃষক হারিছ চৌধুরী ২০১৮ সালে প্রথম ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেন। লাভজনক হওয়ায় পরের বছর সাড়ে চার বিঘা জমিতে আখ চাষ করেন। আখের চারা তৈরি করে জেলার অন্য কৃষকদের কাছেও বিক্রি করেন তিনি। এবার ৬ লাখ টাকা লাভ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘‌নতুন ফসল হিসেবে চাষে আগ্রহী কৃষক। তার জেলায় এই আখ চাষ প্রায় ৫০ হেক্টর ছেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর থেকে।’

আরও