গ্যাস সংকটে আশুগঞ্জ সার কারখানায় ফের ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ

উৎপাদন শুরুর ৩৮ দিন পর আবারো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গত শনিবার রাতে ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

উৎপাদন শুরুর ৩৮ দিন পর আবারো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গত শনিবার রাতে ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) এবি মাহমুদ।

এর আগে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর প্রায় ১০ মাস গ্যাসের অভাবে কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৫ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ শুরু করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)। দেশে সার সংকটের কথা বিবেচনায় নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। তবে উৎপাদন শুরুর মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় আবারো গ্যাস সংকটে পড়ে কর্তৃপক্ষ।

দেশে সার কারখানাগুলোয় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩২৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ দেয়া হয় ১৮৯ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে মোট ছয়টি সার কারখানার মধ্যে ১ মার্চ চারটিতে গ্যাস দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ সার কারখানায় ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা ছিল। সেখানে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এছাড়া বর্তমানে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি ও দেশের বৃহৎ সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। ১ মার্চ এ দুটি সার কারখানায় গ্যাসের চাহিদা ছিল ১১৭ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ সরবরাহ করা হয় কেবল চার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

আশুগঞ্জ সার কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার ১০০ টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম আশুগঞ্জ সার কারখানা। তার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাস সংযোগ পেলেও চাপ কম থাকায় পুরোদমে ইউরিয়া উৎপাদন করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার পর কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।

আশুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক এবি মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাস ছাড়া সার উৎপাদন করা যায় না। ফলে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ উৎপাদন চালু হবে তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

গ্যাম সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাহিদুর রেজা বলেন, ‌‘সরকারি সিদ্ধান্তে আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে আবার কবে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে, সেটিও সরকারি সিদ্ধান্ত। হয়তো চলতি মৌসুমে কারখানাটিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না।’

দেশের রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় চলতি মাসে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা রয়েছে জ্বালানি বিভাগের। যদিও বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ রয়েছে ৮৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। দুই-একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ আরো সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশকিছু জায়গায় গ্যাস সরবরাহ কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জ্বালানি বিভাগের ওই কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে এ মাসে। ফলে যেসব জায়গায় এ মুহূর্তে গ্যাস সরবরাহ কমানোর সুযোগ রয়েছে, সেখানে কমানো হচ্ছে। তবে এটা শুধু রমজান মাসের জন্য। কোনো কারখানা একেবারে বন্ধ করে দেয়ার মতো সুযোগ নেই।’

আরও