পাঁচ মাসেও গঠন হয়নি নতুন নদী রক্ষা কমিশন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সারওয়ার মাহমুদকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল গত বছরের ২৪ মার্চ।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সারওয়ার মাহমুদকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল গত বছরের ২৪ মার্চ। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে এ নিয়োগ বাতিলের ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর পর থেকে কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্য কমিশনারদের পদ ফাঁকাই রয়ে গেছে। অন্য সদস্যদের মেয়াদও শেষ হয়েছে গত আগস্টে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো গঠন হয়নি নতুন নদী রক্ষা কমিশন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চেয়ারম্যানের কিছু কাজ এগিয়ে নিলেও তিনি সার্বক্ষণিক নন। দেশের নদ-নদীর সুরক্ষায় নতুন ও শক্তিশালী কমিশন গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও দেখা যাচ্ছে না কার্যকর কোনো উদ্যোগ।

বিষয়টি অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের নদ-নদীগুলোকে দখল, দূষণ ও নাব্য সংকট থেকে সুরক্ষা দিতে নদী রক্ষা কমিশনেরই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু পাঁচ মাসেরও বেশি সময় কমিশন না থাকায় নদ-নদীগুলোকে দখলমুক্ত করাসহ এগুলোর সুরক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে।

দেশের নদ-নদীর দখল-দূষণ রোধের পাশাপাশি স্বাভাবিক নাব্যতা বজায় রাখতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৪ সালে গঠন হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এর আগের বছরে প্রণয়ন করা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩। এ আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান ও একজন নারী সদস্যসহ ন্যূনতম পাঁচজন নিয়ে কমিশন গঠন হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য সার্বক্ষণিক হবেন। বাকি তিনজন অবৈতনিক হবেন। এছাড়া কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য একজন সচিব, একজন পরিচালকসহ মোট ১৫ কর্মকর্তা থাকার কথা। বর্তমানে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পাশাপাশি সচিব, পরিচালক, হাইড্রোলজিস্ট, মরফোলজিস্ট ও সহকারী জীববিজ্ঞান কর্মকর্তার পদও শূন্য। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে নদী রক্ষা কমিশন কার্যত অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

কমিশন অকার্যকর থাকায় দেশের নদ-নদী অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমাদের পরিবেশবাদীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গঠন হয়েছিল নদী রক্ষা কমিশন। কিন্তু সেটা আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এ সরকারের কাছে আমরা বিষয়টি কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না। আমরা দ্রুত কমিশনকে সচল ও শক্তিশালী দেখতে চাই।’

নদী রক্ষা কমিশনের কার্যালয়ে সরজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-২ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কমিশনের চেয়ারম্যানের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মন্ত্রণালয় আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে। আমি এসে কোনো কাজ থাকলে সেটা করে যাই। কিন্তু কমিশন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য তো একজন চেয়ারম্যানসহ আইনে উল্লিখিত সব সদস্যেরই নিয়োগ হওয়া জরুরি। আশা করি মন্ত্রণালয় থেকে সেটি দ্রতই করা হবে।’

কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান ও গোটা কমিশনের অনুপস্থিতিতে এখন নিয়মিত দাপ্তরিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন অফিস থেকে চিঠি আসছে, সে চিঠির উত্তর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কমিশনের আইন সংশোধনের কাজও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর কমিশনের অনুপস্থিতিতে বাইরের কাজ কম। এ কারণে দপ্তরের মধ্যেই নিয়মিত কাজের পাশাপাশি কিছু প্রশিক্ষণের কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশের নদ-নদীর অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন পাঁচ মাস অকার্যকর থাকার বিষয়টি দেশের নদ-নদী ও পরিবেশ কর্মীদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌বর্তমান সরকারে পরিবেশ নিয়ে সচেতন উপদেষ্টার সংখ্যা বেশি। অথচ এ সময়ে এসে কমিশন অকার্যকর পড়ে আছে। এটি জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা বোধহয় ভুলেই গেছেন নদী রক্ষা কমিশন নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে। নয়তো পাঁচ মাস কীভাবে একটা প্রতিষ্ঠান এভাবে অকার্যকর থাকে? এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়।’

আরও