ময়মনসিংহে পানিতে ডুবে এক মাসে ২০ জনের মৃত্যু

ময়মনসিংহে এক মাসে পানিতে ডুবে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫টি শিশু রয়েছে।

ময়মনসিংহে এক মাসে পানিতে ডুবে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫টি শিশু রয়েছে। যারা সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা গেছে। জুলাইয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্যানুযায়ী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিভাবকের দাবি, অন্য সব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। 

পুলিশ, স্থানীয় সূত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত জুলাইয়ের ১-৩১ তারিখ পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় পাঁচজন, নান্দাইলে দুই, ঈশ্বরগঞ্জে তিন, মুক্তাগাছায় দুই, ত্রিশালে এক, সদরে দুই, ফুলপুরে দুই, গফরগাঁওয়ে এক, গৌরীপুরে এক এবং তারাকান্দা উপজেলায় একসহ ২০ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানী ইউনিয়নের গড়বাজাইল গ্রামে ৪ জুলাই সন্ধ্যায় মরিয়ম (১৪) ও মাবিয়া (৯) নামে দুই মাদ্রাসাছাত্রী পুকুরে ডুবে মারা যায়। 

৬ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীতে ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে নেমে চোরাবালিতে আটকে থানারঘাট এলাকায় সাইফুল ইসলাম (৩০) মারা যান। ৮ জুলাই মাছ ধরতে গিয়ে ফুলপুরের কংস নদে ডুবে দুলাল মিয়া (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। একই দিন হালুয়াঘাটের আমতৈল গ্রামের কংশ নদ থেকে সাবিত্রী (৭৬) নামে এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা এলাকার মৃত শশী জগতের মেয়ে। ৯ জুলাই ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর মাইজ পাড়া টুনবাড়ী এলাকার হেলার উদ্দিনের ছেলে জিহাদ (৭) পুকুরে ডুবে মারা যায়। ১০ জুলাই একই উপজেলার বুনিয়তপুর গ্রামের মেছর উদ্দিনের স্ত্রী শাহেরা খাতুন (৬৫) ও তার নাতনি সুজন মিয়ার মেয়ে জান্নাত নাতিকে বাঁচাতে গিয়ে বৃদ্ধা শাহেরা খাতুনও পুকুরে ডুবে যান। ১১ জুলাই ভালুকার পাড়াগাঁও পাঁচপাই গ্রামের বুলবুল আহমেদের ছেলে আরাফাত হোসেন (১৫) খিরু নদীতে মারা যায়। ১৩ জুলাই দুপুরে ত্রিশালের বইলর বাঁশকুড়ি এলাকার পারভীন আক্তারের মেয়ে শাম্মী (৬) পুকুরে ডুবে মারা যায়। ১৪ জুলাই ভালুকার ধীতপুর ইউনিয়নের বাদেপুরুড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আরমান মিয়ার ছেলে জাহিদ (২) এবং বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে সাকিব (১১) পুকুরে ডুবে মারা যায়। ১৬ জুলাই ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের বালিয়াগড়া গ্রামের আয়নাল হক (৬০) ও তার নাতি সৌদিপ্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে হাবিবুর রহমানের (১২) পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই নান্দাইলের নরসুন্দা নদীতে কলা গাছের ভেলায় খেলা করছিল ছয় শিশু-কিশোর। পানির স্রোতে ভেলা ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মাছ ধরার জালে আটকে মারা যায় সোহাগ মিয়া (১৪) ও কামরুল ইসলাম (১৪)। ২৫ জুলাই গৌরীপুর উপজেলার শালীহর বটতলা এলাকায় পুকুরে ডুবে মারা যায় দুই বছরের শিশু তানিশা আক্তার মীম। সে পৌর শহরের পূর্ব ভালুকা গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার মেয়ে। ২৮ জুলাই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের পাড়াইল চৌরাস্তা ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে মো. সোহাগ (৯) সুতিয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। ৩১ জুলাই গফরগাঁও পাগলা থানা এলাকার মশাখালী ইউনিয়নের মুখী শাহ মিসকিন মাজার এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা (৪২) এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন তারাকান্দা উপজেলার ঢাকুয়া ইউনিয়নের পাগারিয়া (পানিয়াবর) গ্রামের বিজন বাবুর ছেলে প্রশান্ত (৩) পুকুরে ডুবে মারা যায়। 

অধ্যক্ষ কাব্য সুমী সরকার বলেন, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে অভিভাবকের সচেতনা বাড়ানোর বিকল্প নেই। নিজ বাড়ির আঙিনার বাইরে নিরাপদ দূরত্বে পুকুর বা জলাশয় খনন করা উচিত। বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে পুকুরের চারদিকে শক্ত বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট থেকেই বাড়ির ছেলেমেয়ের সাঁতারে পারদর্শী করে গড়তে হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান বলেন, ‘পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া ও নান্দাইল উপজেলায় ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা হবে। এই সেন্টারগুলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। জেলা শিশু অফিস শুধু এগুলো তত্ত্বাবধান করবে। ট্রেনিং সেন্টারগুলোয় মূলত এক-পাঁচ বছরের শিশুর নিরাপত্তার জন্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত রাখা হবে। এছাড়া ৬-১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা হবে।

আরও