রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন কমানোর সিদ্ধান্ত মানবিক সংকট আরো গভীর করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি বাংলাদেশ। সংগঠনটি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে এক পিটিশন দাখিল করে রোহিঙ্গাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য রেশন ও প্রয়োজনীয় সেবা পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে।
আজ রোববার (১৬ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে খানি বাংলাদেশ। পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে ১১০টির বেশি আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি।
সংস্থাটি জানায়, রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি যথাযথ পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ লাখ ৫ হাজার ৬৭৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। এদের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) মাথাপিছু প্রতি মাসে সাড়ে ১২ ডলার করে খাদ্য সহায়তা দিত। ২০২৩ সালে তা ৮ ডলারে নামিয়ে আনা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে তা আরো কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
খানি বাংলাদেশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ তহবিল সংকোচন এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার খাদ্য নিরাপত্তা ও মৌলিক পুষ্টির ওপর ঝুঁকি সৃষ্টি করবে এবং বিদ্যমান মানবিক সংকটকে আরো তীব্র করবে। ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৭ কোটি ৫০ লাখ ২১৪ ডলারের মানবিক সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার ৪৮ ডলার পাওয়া গেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় ৫৭ শতাংশ কম।
জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর দাখিল করা পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ সহায়তা কমানো হলে অপুষ্টি আরো বাড়বে। এছাড়া কাঁটাতারের বেড়া ও ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পের মধ্যে বাস করায় তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। তাই তাদের জন্য টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।
খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি টেকসই পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কৌশল নেয়া জরুরি।
সংগঠনটির সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকি রানা বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত বড় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি ধনী দেশগুলোর বড় প্রতারণা।
কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের সহ-সভাপতি ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ত্রাণ সহায়তার মূল শর্ত হলো খাদ্য। কেউ যদি না খেতে পারে, তাহলে অন্য সব সহায়তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। খাদ্যের অভাব রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা বাড়াবে। একই সঙ্গে শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
খানি বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন একটি মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়।