বেড়েই চলেছে মোটা ও মাঝারি চালের দাম

অন্য সব নিত্যপণ্যের মতো কয়েক বছর ধরে দেশে চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি হওয়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করলেও চালের দাম কমছে না।

অন্য সব নিত্যপণ্যের মতো কয়েক বছর ধরে দেশে চালের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি হওয়া ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ওঠানামা করলেও চালের দাম কমছে না। সম্প্রতি চিকন ও সুগন্ধি চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও দাম বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের।

দেশে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মোটা ও মাঝারি চাল কেনে। আগে দেশীয় উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কিংবা আমদানি হলে চালের দাম কমত। কিন্তু এখন মৌসুম বা আমদানি কোনোটির প্রভাবেই চালের দামে অতটা তারতম্য হয় না। সম্প্রতি ভারত রফতানি শর্ত ও শুল্ক তুলে নেয়ার পাশাপাশি দুই দফায় চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশের স্থলে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও পাইকারি বাজারে পণ্যটির দামে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, উল্টো ১০ দিনের ব্যবধানে মোটা ও মাঝারি চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে।

সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে দেশে মোটা চালের দাম ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালের মার্চে মোটা চালের গড় দাম ছিল ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ টাকা ১১ পয়সায়।

সাম্প্রতিক আমদানি ঘোষণার পরও মোটা চালের দাম বেড়েছে দেশের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। তবে চিনিগুঁড়া, গোবিন্দভোগ, কাটারি, পাইজাম, মিনিকেটসহ বেশ কয়েকটি জাতের চিকন চালের দাম কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে চিনিগুঁড়া চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত কমে ৫ হাজার ৪০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে গোবিন্দভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। আগের তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে কাটারি সেদ্ধ ও আতপ চালও। পাইকারি বাজারে দাম কমার ফলে খুচরা বাজারেও চিকন চালের দাম কমেছে।

মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র পাওয়া যায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে। ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর দেশে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৫ টাকায়। এ বছর একই দিনে একই চাল বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোয় পরিবহন খরচ ও মজুদপ্রবণতার কারণে এ দাম ছিল আরো বেশি।

গতকাল খাতুনগঞ্জের বৃহৎ চালের মোকাম চাক্তাইয়ে বস্তাপ্রতি স্বর্ণা সেদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়, ভালো মানের স্বর্ণা সেদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ ও মোটা সেদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। অন্যদিকে চিকন জাতের পারি সেদ্ধ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়, মিনিকেট আতপ ৩ হাজার ২০০, মিনিকেট সেদ্ধ ২ হাজার ৯০০, কাটারি সেদ্ধ ৩ হাজার ১০০ থেকে ৪ হাজার ও কাটারি আতপ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।

চাক্তাই পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়লেও সে অনুপাতে উৎপাদন বাড়ছে না। বিশ্ববাজারেও কয়েক বছর ধরে চালের দাম বেড়েছে। দেশে ডলারের উচ্চ মূল্য, উৎস রফতানিকারক দেশগুলোয় ন্যূনতম রফতানি মূল্য ও শুল্কারোপ, আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ইত্যাদি কারণেই চালের এ মূল্যবৃদ্ধি।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে। সম্প্রতি চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে আমদানি আরো বাড়তে পারে।

এদিকে চলতি মৌসুমে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কৃষি বিভাগ।

খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ জামান ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্যশস্য হিসেবে চালের চাহিদা বেড়েছে। তবে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং একাধিক বিকল্পের কারণে চিকন চালের বাজারে তেমন অস্থিরতা নেই। মোটা চালের চাহিদা বেশি থাকায় সরবরাহ চেইনে একটু ঘাটতি দেখা দিলেই দাম বাড়তে থাকে।’

আরও