ময়মনসিংহ বিভাগে একমাত্র শিশু হাসপাতাল

জমি অধিগ্রহণেই কেটেছে ছয় বছর মেয়াদোত্তীর্ণের ছয় মাস আগে প্রকল্পের কাজ শুরু

শিশুদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ময়মনসিংহে নির্মাণ করা হচ্ছে ২০০ শয্যা শিশু হাসপাতাল।

শিশুদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ময়মনসিংহে নির্মাণ করা হচ্ছে ২০০ শয্যা শিশু হাসপাতাল। বিভাগের একমাত্র শিশু হাসপাতালটি নির্মাণে ২০১৭ সালে জায়গা অনুসন্ধান শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। জমি অধিগ্রহণ করতেই সময় লেগেছে ছয় বছর। চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে। মাত্র ছয় মাস সময় থাকলেও দৃশ্যমান কোনো কাজই হয়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের মার্চে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের অন্যতম শর্ত ছিল হাসপাতালটি শহরের মধ্যে প্রধান সড়কের পাশে তিন একর জায়গায় নির্মাণ করতে হবে। এজন্য দ্রুত গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরুর কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু শহরের ভেতর স্থান নির্ধারণ করতে না পারায় নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

তবে শহরের বাসিন্দা বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নির্মাণকাজে দেরি তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছিল। কারণ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার অন্য সব হাসপাতালে সারা বছরই শিশু রোগীর চাপ বেশি থাকে। চিকিৎসকদের সক্ষমতার দুই থেকে তিন গুণ বেশি শিশু রোগী দেখতে হয়। এছাড়া শিশু বিভাগে শয্যা পাওয়া যায় না সরকারি হাসপাতালে। অনেক সময় মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা দেয়াও তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালটির কাজ শুরু হওয়ায় এখন আরো ভালো সেবা পাবে ময়মনসিংহবাসী। স্বতন্ত্র শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ হলে বাড়তি রোগীর চাপ সামলানো চিকিৎসাসেবার মানও বাড়বে।

এদিকে গণপূর্ত বিভাগ নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান শেষে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিপত্রও শেষ করেছে। দশতলা ভিতসম্পন্ন হাসপাতালটি এখন দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ হবে। সেখানে আউটডোর অফিসের কার্যক্রম চলবে। পরে ওয়ার্ড স্থাপন রোগী ভর্তি চলবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমত ২০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক শিশু হাসপাতাল হবে এটি। হাসপাতালটিতে শিশু মেডিসিন থেকে শুরু করে সব বিভাগ থাকবে। যাতে প্রতিষ্ঠান থেকেই শিশুরা সব ধরনের চিকিৎসা পেতে পারে। এছাড়া দক্ষ জনবল, অভিজ্ঞ চিকিৎসক অত্যাধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ পরিপূর্ণ আধুনিক শিশু হাসপাতাল হবে এটি। পরে ধীরে ধীরে এর সেবার পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যাপারে ময়মনসিংহের সিভিল সার্ভিস ডা. মো. নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুদের সাধারণ চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে কিডনি রোগ ক্যানসার ওয়ার্ডও থাকবে। হাসপাতালটিতে আইসিইউ, ফটো থেরাপি, নিউ নেটাল কেয়ারসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকবে।

এর আগে ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদার কাজ না করায় দরপত্রটি গণপূর্ত অধিদপ্তর বাতিল করে। হাসপাতাল নির্মাণের দরপত্রটি আবার আহ্বান করা হয়েছে।

বিষয়ে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালে দুতলা নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৩০ কোটি টাকার সংস্থান রেখে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ময়মনসিংহ-মুক্তাগাছা মহাসড়কের রহমতপুর বাইপাস সংলগ্ন বাড়েরা মৌজায় তিন একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময় জমির পরীক্ষা করা হয়। স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিজাইন বিভাগের দেয়া কাঠামোগত নকশার ওপর ভিত্তি করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নূরুল আমীন কালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহে দুই কোটি জনসংখ্যা। ময়মনসিংহ নগরীতে একটি আধুনিক মানসম্পন্ন শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। তবে দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণ করে শিশুদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

আরও