গ্যাসের অভাবে ঝুঁকিতে দেশের শিল্প খাত। চাহিদার তুলনায় এ জ্বালানি মিলছে অর্ধেকেরও কম। আর এ সংকট কাটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেবে সরকার। পাশাপাশি চলতি মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাড়তি চার কার্গো এলএনজি আমদানি করে শিল্প খাতে দৈনিক ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। সচিবালয়ে গতকাল শিল্প শ্রেণীতে গ্যাস সরবরাহসংক্রান্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে শিল্পে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সবাই মিলে আমরা কতগুলো সিদ্ধান্তে এসেছি। রমজান উপলক্ষে যে গ্যাস দেয়া হতো সেখান থেকে আমরা ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুতের পরিবর্তে শিল্পে দেব। এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত চারটি এলএনজি কার্গো আনব। এতে শিল্পে গ্যাসের বরাদ্দ ২৫ কোটি ঘনফুট বাড়বে।’
শিল্প খাতের গ্যাস সংকট মোকাবেলায় কৌশল তুলে ধরে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমরা শিল্প এলাকায় দেব। আর শিল্প এলাকাগুলো ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত করে দেবেন। সেগুলোয় আমরা সরবরাহ বাড়াব এবং এগুলো ক্রমাগত তদারক করব। আমাদের দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। নতুন নতুন শিল্প হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ কমাইনি। ঘাটতি পূরণের জন্য এলএনজি আমদানি বাড়াচ্ছি। এখন যে তাদের (ব্যবসায়ী) আমেরিকার রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের কারণে সমস্যা হচ্ছে, এজন্য আমরা এটা সম্পর্কে খুব সংবেদনশীল।’
সামনে গরম বাড়লে লোডশেডিং মোকাবেলায় প্রয়োজনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানো হবে বলে জানান ফাওজুল কবির খান। আপাতত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না উল্লেখ করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘সংকট থাকলেও জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিল্পের এ বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে সরকারের ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। যেটা ঘাটতি, কিন্তু শিল্পের স্বার্থে করা হবে, যেটা ইকোনমিতে ব্যালান্স হবে।’
অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে টাস্কফোর্স গঠন করে কাজ করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজস্ব গ্যাসের অনুসন্ধানে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের টেন্ডার দেয়া হয়েছে। গ্যাসের জন্য এ বছর ৫০টি কূপ খনন করা হবে এবং আগামী বছর খনন করা হবে ১০০টি কূপ। সেখান থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।’
গ্যাস অনুসন্ধানে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্থলভাগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘শিল্পোদ্যোক্তারা সরকারের কাছে সমস্যা তুলে ধরেছে। সরকার যেভাবে পরিকল্পনা করেছে, সে অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা হলে আমরা সন্তুষ্ট ও আমাদের প্রয়োজন মিটবে।’
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামাল, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।