‘জেসমিন বিপ্লব’ নামে পরিচিত এ ঘটনা দেশটিতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তনের ব্যাপক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যদিও অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পরিবর্তে জনতুষ্টি অর্জনেই মনোযোগী ছিল বেশি। দেশটির সরকারের এ জনতুষ্টিবাদের চর্চা তিউনিসিয়ায় নতুন করে উসকে দেয় ঘৃণা ও সংঘাতের চর্চাকে। দেখা দেয় এক দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা।
তিউনিসিয়ার মতো দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা শাসককে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত করেছে বাংলাদেশীরাও। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ছয় মাস পেরোলেও এখনো আর্থসামাজিক খাতে জনআকাঙ্ক্ষাগুলো সেভাবে পূরণ হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা এবং অর্থনীতি পূর্ণ গতিশীল করে তোলার পরিবর্তে যেকোনো আন্দোলনের মুখে যেকোনো দাবিকে দ্রুত মেনে নেয়াসহ নানা ধরনের অকার্যকর ও অগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সময় নষ্ট হচ্ছে বেশি। যদিও একই সময়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। মূলধনের প্রবাহ কমে গিয়ে শ্লথ হয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি। আসছে না দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগ। বাড়ছে দারিদ্র্য ও কর্মহীনতা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশেও তিউনিসিয়ার মতো আত্মঘাতী জনতুষ্টিবাদ বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জুলাই আন্দোলন চলার সময় এইচএসসি ও সমমানের কিছু বিষয়ে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে স্থগিত হওয়া পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাসের দাবিতে আন্দোলনে নামে এইচএসসি ও সমমান পর্যায়ের পরীক্ষার্থীরা। ক্ষমতা গ্রহণের ওই মাসেই সরকারও অটোপাসের দাবি মেনে নেয়। সেই সঙ্গে সামনে আসতে থাকে একের পর এক দাবি। এর মধ্যে অনেকগুলোর যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়।
রাজনীতিবিদ ও পর্যবেক্ষকদের মতে, রাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে অচলায়তনে রূপ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে জনতুষ্টি অর্জন করতে গিয়ে দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়েছে। এসব কারণে সরকারের কার্যক্রম প্রকৃত মৌলিক সংস্কারগুলো থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছয় মাসে তাদের যেটা মূল কাজ তারা সেটি এখনো শুরু করতে পারেনি। সংস্কারের কাজগুলো শুরু করেছে এটা খারাপ না। এটা যদি সম্পন্ন করতে পারে তাহলে ভালো। আর দ্রুত নির্বাচনটা যদি করে ফেলতে পারে সেটা ভালো। তাদের ব্যর্থতা যদি বলি, সেটা হচ্ছে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে জনতুষ্টিবাদের লক্ষণ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পপুলিস্ট রাজনীতি কিছুদিন ভালো চলে। মানুষ যখন বুঝতে পারে এর পেছনে কী তখন এটি তারা আর গ্রহণ করে না। ফলে যারা দেশ চালায় আর রাজনীতি করে তাদের এটাকে মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।’
রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীগুলোর অন্যতম। প্রায় প্রতিদিনই একিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ুমান সূচকে সবচেয়ে দূষিত বাতাসের নগরীর তালিকায় শীর্ষে উঠছে ঢাকা। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দেশের নদীগুলোর দূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ ও জলবায়ুগত সংকট মোকাবেলায় অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা ছাড়া আর কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ তেমন একটা দেখা যায়নি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নানান মহল থেকে তোলা দাবির বিষয়ে মনে হয় সরকারের একটা ভীতি আছে। যৌক্তিক দাবির সঙ্গে অযৌক্তিক দাবিও কিছু ক্ষেত্রে মেনে নেয়া হয়। বিশেষ করে ছাত্ররা যদি কোনো দাবি করে তখন বিচার-বিবেচনা করে না। আবার যৌক্তিক অনেক দাবি পূরণ হচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়টাও পরিষ্কার না। যেখানে অনেকগুলো মামলা হয়েছে খুব পাইকারি মামলা, দুর্বল মামলা। এটিও একটি দুর্বলতার জায়গা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ খারাপ। আরেকটি হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জোরজবরদস্তি, মব ভায়োলেন্স, চাঁদাবাজি একটি অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকা দরকার ছিল সেটি নেই। এসব ক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে দুর্বলতা প্রকাশ করছে সরকারের। কিছু পদক্ষেপ খুব চিন্তার বিষয়। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কিছু পদক্ষেপ, যেমন টেন্ডার ছাড়া এলএনজি আমদানির চুক্তি করা, দায় মুক্তি আইনের অধীন প্রকল্পগুলোর চুক্তি অব্যাহত রাখা, রামপালে সুন্দরবন ধ্বংসকারী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হবে না বলে এটি আগেই ঘোষণা করা; এগুলো একটু উদ্বেগের বিষয়। সে কারণে ছয় মাসের প্রত্যাশার সঙ্গে কিছু অসংগতি রয়েছে। তবে কমিশন গঠন করা ভালো কাজ ছিল। কমিশনের রিপোর্ট জমা হয়েছে এটা ভালো কাজ। এগুলোর ভিত্তিতে সরকারের ভূমিকা যথাযথ হওয়া দরকার।’
বাংলাদেশে তিউনিসিয়ার পুনরাবৃত্তি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটি সরকারের ভূমিকার ওপর নির্ভর করবে। এখনো সরকারের করণীয় আছে অনেক কিছু। কিন্তু সরকার এ রকম দুর্বল থাকলে তো হবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অলস মনে হচ্ছে, কোথাও মনে হচ্ছে অগোছালো। কোথাও কোথাও রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এ সরকার তো একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে। এগুলো থেকে বের হতে হবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লব পরবর্তী পরিস্থিতির সাযুজ্য দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। তাদের ভাষ্যমতে, দুই দেশের অভ্যুত্থানের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটগুলোর মধ্যেও বেশ মিল রয়েছে। যেমন খাদ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বে এক সময় জর্জরিত ছিল আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া। এক পর্যায়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলির পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। অবশেষে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে দখল করে রাখা ক্ষমতার মসনদ ছাড়তে বাধ্য হন বেন আলি। গণতন্ত্রের জন্য শুরু হওয়া এ আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে পুরো আরব বিশ্বে, যা ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী। আর তিউনিসিয়ায় তা পরিচিতি পায় জেসমিন রেভল্যুশন বা ‘জেসমিন বিপ্লব’ নামে।
তবে জেসমিন বিপ্লবের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নয়, নতুন করে খাদে পড়তে থাকে দেশটি। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জনতুষ্টিবাদ (পপুলিজম), রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ঘটিয়ে আর্থসামাজিক অবস্থান উত্তরণ ঘটাতে না পারা ও অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে ব্যর্থতা দেশটিকে এদিকে ঠেলে দেয়।
তিউনিসিয়ায় অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরুতেই বিতর্কিত করে তোলে আগের প্রশাসনের সুবিধাভোগীদের উপস্থিতি। অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহতদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্তে ব্যর্থতা এ বিতর্কের মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে। অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও তেমন কোনো অর্জন দেখাতে পারেনি দেশটির তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকার। তৈরি করা যায়নি তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দ্রুত পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তেমন একটা সফলতা আসেনি। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সেক্যুলার ও উগ্র ডানপন্থীদের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। বিস্তৃতি ঘটে ঘৃণা ও সংঘাতের। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে দেখা দেয় এক দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা। জেসমিন বিপ্লবের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘন ঘন সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে দেশটি।
বাংলাদেশেও এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসে মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, বিনিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় এখনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সঙ্গে রয়েছে কর্মসংস্থানের সংকট। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। প্রায় বছর আড়াই আগে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলংকায় এক সময় মূল্যস্ফীতির হার ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দেশটি গত পাঁচ মাস ধরে মূল্য সংকোচনের ধারায়। অর্থাৎ দেশটিতে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে না, কমছে। প্রায় দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের নিচে। যদিও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
দেশের অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ইস্যুকৃত মূল্যমানের বেশির ভাগই এখনো ব্যাংক খাতের বাইরে। অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন থেমে থাকার লক্ষণ দেখালেও এখন আবারো সক্রিয় হচ্ছে অপরাধের অর্থনীতি।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের লাগাম টানতে না পারলে আশাবাদী হওয়া যাবে না বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। তার ভাষ্যমতে, ‘এ সরকার বেশকিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। বিশেষ করে আমাদের মূল্যস্ফীতির সমস্যা ছিল সেটি এখনো আছে। সামগ্রিকভাবে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না। দেশী-বিদেশী দুটোই। সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্রে অন্তর্বর্তী সরকার এ সমস্যাগুলো নিয়েই এসেছে। আমাদের আশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করবে ভালোভাবে। কিন্তু কিছু জায়গায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া আমার। যেমন মূল্যস্ফীতির বিষয়ে এখনো কোনো বড় সাফল্য দেখিনি। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এটা যতটুকু সরকারের সাফল্য তার চেয়ে বেশি সিজনাল ইফেক্ট আমি বলব। সামনের দিনগুলোয় বিশেষ করে রোজার সময় মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমার সন্দেহ আছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় যে রকম সমন্বয় দরকার ছিল সেটি আমি দেখিনি।’
দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অপহরণ, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়েছে। পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরানো গেলেও এখনো কার্যকরভাবে সক্রিয় করে তোলা যায়নি। মব জাস্টিস, হেফাজতে মৃত্যু এমনকি কর্তব্য পালনকালে পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনাগুলোও বেড়েছে।
ছয় মাসের মূল্যায়নে ভালো-মন্দ দুই দিক রয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগীয় সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা দেখি ভালো-মন্দ, সফলতা-ব্যর্থতা দুটিই আছে। কারণ সরকারকে প্রথম তো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে নজর দিতে হয়েছে। সেটা মোটামুটি তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নতি করতে পেরেছে। তার ওপর পতিত স্বৈরাচারের দোসররা আন্দোলনের মাধ্যমে কিছুটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করেছে। সেটি প্রতিহত করতে পেরেছে। তার ওপর যে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে সে ব্যাপারে অগ্রগতি আনতে পেরেছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জায়গায় তাদের দুর্বলতা বা ব্যর্থতা রয়েছে। ট্যাক্স, ভ্যাট এগুলো বসিয়েছে যা স্বার্থবিরোধী। সরকারের সংস্কারের জন্য যে ঘোষণা সেটিও বেশি গতি পায়নি। আরো গতি পাওয়া দরকার ছিল।’
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে সরকারের কাজের মূল্যায়ন করলে আমরা দেখি; দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে তাদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের না। অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করলেও দ্রব্যমূল্যসহ নানা বিষয়ে জনগণ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট না। গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর গতি মন্থর। সংস্কার কমিটিগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সরকার কাজ শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের পরিকল্পনামাফিক কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। গত ছয় মাসের সমস্যাকে মানুষ বড় করে দেখবে না যদি আগামী ছয় মাসে সরকার আশানুরূপ ভালো করতে পারে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা যদি একটি করে ভালো কাজ করতে পারেন তাহলেই অনেক বড় পরিবর্তন সংঘটিত হবে বলে আশাবাদী জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। কয়েকদিন আগে বণিক বার্তা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘হয়তো রাতারাতি সব বদলানো সম্ভব নয়। তবে সরকারের আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন। উপদেষ্টারা অনেক রক্তের বিনিময়ে এ জায়গাটা পেয়েছেন। তাই প্রত্যেক উপদেষ্টা যদি একটি করে ভালো কাজ করেন, তাহলেই অনেক বড় পরিবর্তন হবে এবং উপকার হতো। এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। শুধু সবার সদিচ্ছা দরকার। এ পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী এবং এ বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন মানুষ তাদেরকে (উপদেষ্টাদের) স্মরণে রাখবে।’