প্রশাসন বন্ধ করলেও বান্দরবানে চলছে অবৈধ ইটভাটা

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বান্দরবান জেলার সবকটি ইটভাটার কার্যক্রম চলমান থাকার অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর সম্প্রতি জেলার ১৪টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বান্দরবান জেলার সবকটি ইটভাটার কার্যক্রম চলমান থাকার অভিযোগ উঠেছে। হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর সম্প্রতি জেলার ১৪টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। সময় জরিমানাসহ ভাটা বন্ধসংক্রান্ত সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়া হয়। এর পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম। এদিকে হাইকোর্টে রিট করে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কোনো কোনো ভাটামালিক।

হাইকোর্টে রিট করেনি, এমন ভাটাগুলোয় পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হবে এবং এর আগে বন্ধ ঘোষিত ভাটাগুলো কার্যক্রম চালিয়ে থাকলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।  

জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি বান্দরবান, রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়িতে থাকা সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাতদিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জেবিএম হাসান বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। রুলে তিন জেলায় লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে পরিচালিত ভাটামালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের পরিচালক, তিন জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ২৪ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস সমন্বয়ে জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ১১টি আলীকদম উপজেলায় একটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা চালানো হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সময় ১২টি ইটভাটাকে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে প্রতিটি ভাটার সামনে ভাটা বন্ধসংক্রান্ত সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়া হয়। একইভাবে পরবর্তী সময়ে আলীকদমে আরো দুটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান সূত্র জানায়, জেলায় ৬৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি, রোয়াংছড়িতে একটি, রুমায় দুটি, থানচিতে একটি, আলীকদমে তিনটি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০টি লামায় ৩৫টি অবৈধ ভাটা রয়েছে।

সম্প্রতি পরিচালিত অভিযানে ফাইতং ইউনিয়নের ইউবিএম, এসকেবি, এসবিডব্লিউ, এফএসি, ইবিএম, এমবিএম, এসবিএম, এমএমবি, ফাইভএমবি, এমবিআই, এনআরবি আলীকদমের ইউএমবিসহ তিনটি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানায়, অভিযানের পর তিনদিনের মধ্যে বন্ধ ঘোষিত ভাটাগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। ফসলি জমি বনাঞ্চলের পাশে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ভাটামালিকরা নির্বিচারে পাহাড় কাটছেন। জ্বালানি কাঠের জন্য ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ কাটার ফলে পাহাড়ি সামাজিক বনায়ন উজাড় হচ্ছে।

লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের শিবাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঘেঁষা ইটভাটাগুলোর বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে প্রতি বছর মৌসুমে শিশু ছাত্রছাত্রীসহ বিদ্যালয়ে সবার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এত অভিযান চালালেও সেসবের কোনো সুফল মিলছে না।

সরেজমিনে ফাইতং ইউনিয়নে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের বানিয়াছড়া থেকে ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ডের ফাদুছড়া এলাকার এফএসি নামের ফরিদুল আলমের ভাটা পর্যন্ত প্রায় কিলোমিটারজুড়ে মাটি, কাঠ ইটবোঝাই শত শত ডাম্পার এবং ট্রাক চলছে। কারণে গত বছর এলজিইডির করা কার্পেটিং সড়কের অনেকাংশ ভেঙে গেছে। খাল-ঝিরি-ছড়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বনাঞ্চল, পাড়াঘেঁষে সড়কের পাশে ভাটাগুলোর অবস্থান। ৭নং ওয়ার্ডের শিবাতলী খাল, ৮নং ওয়ার্ডের ফাদুছড়া খাল ৯নং ওয়ার্ডের ফাইতং খালের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সব ভাটা বাঁধ দিয়ে রেখেছে। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে। ভাটাগুলোর কার্যক্রমের ফলে হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। রাইম্যাখোলা এলাকার বিবিসি নামের ভাটাঘেঁষা একটি পাহাড় এক্সক্যাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছিল। ওই ছবি ধারণ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ভাটামালিক রিংকুর ম্যানাজার (নাম বলে নাই) আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের পরদির্শক মো. আশফাকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আপনি অফিসে আসেন, বিস্তারিত জানাব।

ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মুক্তার আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, অভিযান চলাকালে ১৯টি ইটভাটার মালিক ছয় মাসের জন্য ভাটা চালানোর বিষয়ে হাইকোর্টের রিট কপি দেখিয়েছেন। এজন্য ভাটাগুলোয় অভিযান চালানো হয়নি। রিটে পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিক পানিরপ্রবাহ বন্ধ বনের কাঠ কেটে জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

অভিযান পরিচালনা করে ১৪টি অবৈধ ভাটা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুরাইয়া আক্তার সুইটি। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, জেলায় ২৭টি ইটভাটার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা রয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার সুযোগ নেই। বন্ধ করা ইটভাটাগুলো ফের কার্যক্রম চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে

আরও