চট্টগ্রামের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। দফায় দফায় নোটিস দেয়া সত্ত্বেও বকেয়া বিল পরিশোধ করছে না সরকারি ২৭টি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে কয়েক মাস ধরে বকেয়া আদায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করার পথে হাঁটছে পিডিবি। এমনকি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
দুই মাসের ব্যবধানে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) প্রধান কার্যালয় সিআরবি, বিভাগীয় কার্যালয় পাহাড়তলীতে দুই দফায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পিডিবি। সর্বশেষ গতকাল সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। একই দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বিদ্যুৎ সংযোগ সকাল থেকে বন্ধ রাখে পিডিবি। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিঠির মাধ্যমে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের অঙ্গীকার করলে দুপুরের পর পুনরায় সংযোগ দেয়া হয়।
পিডিবি বলছে, সরকার বিদ্যৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে। চাহিদা অনুপাতে শিল্প-কারখানাসহ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় বাজেট থেকে আগে ব্যবহার করা বিদ্যুৎ বিল আদায়ে এখন থেকে নিয়মিত খেলাপি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন পিডিবির কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) মো. হুমায়ুন কবির মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি সরকারি পর্যায়েও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে আমরা সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দফায় দফায় নোটিস দিয়েছি। অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় বকেয়া রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।’ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সর্বশেষ ছয় মাসে পিডিবিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বকেয়ার পরিমাণ ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার ৩১১ টাকা ৮০ পয়সা।
মে ও চলতি জুনের পাওনা যুক্ত করলে মোট বকেয়ার পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা ছাড়াবে। এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এলজিইডির কাছে ৭১ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫ টাকা ৬৫ পয়সা, আবাসন পরিদপ্তরে ১১ কোটি ২৮ লাখ ২৪ হাজার ৯০৩ টাকা ৯৪ পয়সা, প্রতিরক্ষা বিভাগে ২১ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৮৮২ টাকা, গণপূর্তে ২ কোটি ২৫ লাখ ১৩ হাজার ২০৩ টাকা ২০ পয়সা, শিক্ষা বিভাগে ৭০ লাখ ৩০ হাজার ১২২ টাকা ২৮ পয়সা, স্বাস্থ্য বিভাগে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা ৮৯ পয়সা, সমাজসেবায় ১০ লাখ ১২ হাজার ৬৭৫ টাকা ৪২ পয়সা, রেলওয়েতে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ৪৮১ টাকা ১১ পয়সা, বন বিভাগে ১০ লাখ ৪ হাজার ৪০৭ টাকা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫৩ টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৬৯ হাজার ৭২৫ টাকা ২৩ পয়সা পাওনা রয়েছে।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিল রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বোচ্চ পাওনা ৭১ কোটি ৯ লাখ টাকারও বেশি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাম্প্রতিক বিলগুলো নিয়মিত পরিশোধ করলেও আগের বকেয়া বিল পরিশোধে গড়িমসি করছে।
এর আগে পিডিবি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে গণপূর্ত, পরিবেশ অধিদপ্তর, খাদ্য বিভাগ, আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন রেখেছিল। পিডিবি বলছে, যত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাই হোক না কেন বিদ্যুৎ বিল আদায়ে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিতরণ) অশোক কুমার চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া বিলের পরিমাণ ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। মে ও জুনেও বড় অংকের বিল বকেয়া হয়ে আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ নির্বাহ, জ্বালানি আমদানিসহ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের খরচও অনেক। বকেয়া আদায় না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য বেসরকারি গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
গতকাল সকালে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও রেলওয়ের পক্ষ থেকে সংযোগ পুনরায় স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে বকেয়া বিল পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
পিডিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রেলের কন্ট্রোল রুমগুলোয় কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুতের ব্যাকআপ রয়েছে। তাছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবর্তে শুধু মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে আগামীতে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পিডিবি।